“মোক দুইট্যা ঠ্যাহা দ্যাও বাবা, ৩ দিন থাকি হাতোত কাম নাই, কিছু কিনি খাইম। বান আসার পর থাকি গোলা ওয়ালার ঘরে বেচি কমি গেইছে, তিন দিন থাকি গোলায় গোলায়, বাড়ি বাড়ি ঘুরব্যার নাগছোং কাইয়ো মোক কামোত না নেয়” এমনি করে ভীতু অসহায় কন্ঠে দোকানির প্রতি আকুতি জানাচ্ছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের টাপুরচর এলাকার বাসিন্দা লাকড়ী শ্রমিক মোঃ আব্দুল করিম (৬০)।
বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে পৌর শহরের পুরাতন পশু হাসপাতাল মোড় এলাকায় লাকড়ী শ্রমিক আব্দুল করিমের ভিক্ষা বৃত্তির এমন চিত্র দেখা যায়।
আব্দুল করিমের সাথে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারনে লাকড়ী ব্যবসায় মন্দা চলছিল। সেই সাথে দুই মাসেরও অধিক সময়ের দীর্ঘায়িত বন্যায় আকাল পড়েছে লাকড়ী ব্যবসায়। বন্যার্ত মানুষজন অর্থ সংকটে থাকায় কমে গেছে লাকড়ীর বিক্রি। বিক্রি কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লাকড়ী ব্যবসায়ীরা। ফলে লাকড়ীর গোলা ঘর গুলোতে নিচ্ছেন না পর্যাপ্ত শ্রমিক। এতে করে জেলা শহরের বিভিন্ন গোলা ও বাড়ী বাড়ী ঘুরেও কাজ জুটছে না আব্দুল করিমের। কাজ না জোটায় চোখে মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে খাদ্যের যোগান দেওয়ার জন্য দুটো টাকা ও এক মুষ্ঠি ভাতের আশায় অন্যের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন ঐ বৃদ্ধ। এতে করে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে তার। আব্দুল করিমের নেই কোন সন্তান। একমাত্র ভরসার স্থল স্ত্রী ৪-৫ লক্ষ টাকা ঋণ করে টাকা অন্যত্র সরিয়ে ঋণের বোঝা আব্দুল করিমের উপর চাপিয়ে সংসার ছেড়ে পালিয়েছেন অন্যত্র। সন্তানহীন ও স্ত্রী পলাতক অসহায় বৃদ্ধ আব্দুল করিমের বর্তমানে দিন কাটছে দূর্বিসহ।
আরও পড়ুন: তিন বছরে রোহিঙ্গা শিবিরে ৭৫ হাজার ৯৭১ শিশু জন্ম: সেভ দ্যা চিলড্রেন
এ বিষয়ে হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মোঃ এনামুল হক বলেন, ঐ বৃদ্ধের স্ত্রী ৪-৫ লক্ষ টাকা ঋণ করে টাকা অন্যত্র সরিয়ে ঋণের বোঝা স্বামীর উপর চাপিয়ে ঢাকায় গিয়েছেন। বৃদ্ধের কোন সন্তান নেই। উনি লাকড়ীর শ্রমিক। আমি যা ত্রাণ বরাদ্দ পাই তা ওয়ার্ডবাসীর মাঝে বিতরণ করি। উনি আমার কাছে কখনো আসেননি। আমার কাছে আসলে উনাকে সহযোগীতা করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো: উমর ফারুকের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করে করোনা ও বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষদের জন্য কোন বরাদ্দ আছে কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে তাদের তালিকা দেওয়া আছে। ইউপি সচিবের কাছে গিয়ে তা দেখতে পারেন।