রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা উভয়ই ব্যর্থ: টিআইবি

ছবি: সংগৃহিত

ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের ঘাটতিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। এটি নিরসনে ঢাকা ওয়াসা, দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ব্যর্থ হয়েছে।অন্যের কাঁধে দোষ চাপিয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের এই ব্যর্থতার দায় অস্বীকারের সুযোগ নেই। তাই দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায় অন্যের ওপর না চাপিয়ে সংকট সমাধানে এককভাবে সিটি কর্পোরেশনকেই এই দায়িত্ব নিতে হবে।

রবিবার (২৬ জুলাই) দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেছে।

সংস্থাটির মতে, ঢাকা ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশন এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব। এতে সমন্বয়হীনতা, অসুস্থ প্রতিযোগিতা ও পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতিতে জলাবদ্ধতা সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আইন অনুসারে ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। আর শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। ঢাকা শহরের মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২ হাজার ৫শ কিলোমিটার ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ২৬টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসার। আইনের এই মারপ্যাঁচে বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতা নিরসনে একে অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়াতে চায় প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে বর্ষা এলেই জনগণের ভোগান্তি বছর বছর আরও তীব্র হয়। তাই অবিলম্বে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন করে একক প্রতিষ্ঠানের হাতে সম্পূর্ণ ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা, পয়ঃনিষ্কাশন খাল ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করতে হবে।

তার মতে, নাগরিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দুই সিটি কর্পোরেশনকেই এই দায়িত্ব প্রদান করা উচিত। তাদের হাতেই ওয়াসার এখতিয়ারভুক্ত কাজের পরিবীক্ষণের দায় থাকতে হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে দায়িত্ব পালনে বিগত বছরগুলোতে ঢাকা ওয়াসা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার একটি প্রতিবেদনে তাদের আওতাধীন ২৬টি খালের মধ্যে ২০টির প্রবাহ পূর্ণ সচল দাবি করা হয়। এর মধ্যে কাটাসুর খালকেও সচল উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু টিআইবির গবেষণায় দেখা যায়, উল্লেখিত খালের প্রবাহ সচল নেই। বিভিন্ন কঠিন বা ভারি বর্জ্য ড্রেনের উপরিভাগ এবং খালের মুখে জমে রয়েছে। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যেও দেখা যায়, সর্বশেষ (২০১৯-২০) অর্থবছরে ঢাকা ওয়াসার ২৬টি খালের মধ্যে অন্তত ১০টিতে কার্যত পুনঃখনন ও পরিষ্কারের কাজ করা হয়নি।

আরও পড়ুন: ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে স্বর্ণের দাম

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ওয়াসার আওতাধীন খাল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণে নিয়মিত তদারকির ঘাটতিও লক্ষণীয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতিমাসে কমপক্ষে দু’বার খাল ও ড্রেন পরিদর্শনের নিয়ম থাকলেও তা করা হয় না। ফলে খাল দখল, খালের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে খাল ভরাট হয়ে থাকে। তাই ওয়াসার ব্যর্থতা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। আবার ওয়াসার ওপর এককভাবে সব দোষ চাপিয়ে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনা ও বর্জ্য অপসারণে ব্যর্থতার দায় সিটি কর্পোরেশনও কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

টিআইবির গবেষণালব্ধ তথ্য অনুযায়ী, ওয়াসা তার দায়িত্বে থাকা খাল ও ড্রেনগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও দখলমুক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে একথা যেমন সত্য, তেমনি এই খাল ও ড্রেনগুলোতে পতিত কঠিন বর্জ্য অপসারণের পর সেগুলো পাড় থেকে অপসারণ না করে ওয়াসার ওপর দায় চাপানোর নজিরও সিটি কর্পোরেশনের আছে। আবার সিটি কর্পোরেশনের অধীনে যে প্রায় ২ হাজার ৫শ কিলোমিটার ড্রেন আছে সেগুলোও কতটা বর্জ্যমুক্ত বা সচল সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *