রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ইউরোপকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

ফাইল ছবি

মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ইউরোপ-আমেরিকার দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ঢাকার প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর আহ্বানের জবাবে আজ (শুক্রবার) এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে, আমাদের পক্ষে আর বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় দেয়া সম্ভব নয়। যারা বিশ্বে বড় বড় মাতব্বর, যারা সব সময় আমাদের উপদেশ দেন, তারা তো কিছু রোহিঙ্গা নিতে পারেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেদিন ইউরোপের একজন রাষ্ট্রদূত আমার কাছে এসেছিলেন। আমি বললাম, আমার দেশের মাথাপিছু আয় দুই হাজার ডলার আর আপনার দেশের মাথাপিছু আয় ৫৬ হাজার ডলার। আমার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১২০০ লোক থাকেন, আর আপনার দেশে প্রতি বর্গমাইলে ১৫ জন লোক থাকেন। আপনারা কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে যান না কেন?

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মুখে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। এভাবে নির্যাতনের শিকার হয়ে এর আগেও আগে চার লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আশ্রিত রয়েছে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত একজনও ফেরত যায়নি।

এরই মধ্যে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে নৌকায় করে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করতে চাইলেও সেসব দেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। পরে বাংলাদেশে আশ্রয় চায় তারা। ঢাকা আর কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে না চাইলে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা দফায় দফায় অনুরোধ জানাতে থাকে সরকারকে।

এই প্রসঙ্গ টেনে ভিডিও বার্তায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আন্দামান সাগরে, ভারত মহাসাগরে যখনই রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা আশ্রয়ের জন্য ভাসতে দেখা যায় সবাই তখন বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভাবখানা এমন, যেহেতু আমরা আগে ১১ লাখ আশ্রয় দিয়েছি, বাকিগুলোকে আমাদের নিতে হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা যেন আমাদের একারই সামলাতে হবে।

‘আমরা বলেছি যে, আমরা পারব না। আমাদের আর কোনো জায়গা নেই। আর অন্যদেরও রেসপনসিবিলিটি আছে। আর রোহিঙ্গা আমাদের একার সমস্যা নয়, এটা বিশ্বের সমস্যা।’

সম্প্রতি সাগরে ভাসতে থাকা ২৭৭ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা (কক্সবাজারে) ক্যাম্পে অনেক ঘিঞ্জি পরিবেশে থাকেন। আর আকাম-কুকাম করেন। ভাসানচরে গেলে কাজের সুযোগ পাবেন। রাখাইনে যেমন মাছ ধরতেন, কৃষিকাজ করতেন, তেমন সুবিধা সেখানেও পাবেন। তারা অর্থনৈতিক কাজে যুক্ত হতে পারবেন। এতে তাদের ভালো হবে।

ড. মোমেন ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বলেন, ভাসানচরে যাতায়াতের সমস্যার কথা বলছেন অনেকেই। তবে যারা সে কথা বলছেন, তারা বোট সার্ভিস চালু করতে পারেন। কেন তারা এই সার্ভিস চালুর জন্য এগিয়ে আসছেন না?

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *