লালপুরে উৎকোচের বিনিময়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান

নাটোরের লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একজন চিকিৎসক রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা না দিয়ে  উৎকোচের বিনিময়ে স্থানীয় বে-সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এতে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা , এছাড়া  স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ঔষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের আনাগুনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রোগীসহ তাদের স্বজনরা ।  অন্য দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর সংলগ্ন একটি মেয়াদ উত্তীর্ণ ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারী নিয়ম তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে  জমজমাট ভাবে ব্যবসা করে যাচ্ছে । স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ঐ বে-সরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে কোন প্রকার আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন না ।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাঃ শামীমুজ্জামান শামীম নিয়মিত বসেন হাসপাতালের সামনে অবস্থিত পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা বেশীরভাগ রোগীর অভিযোগ চিকিৎসা নিতে আসলে ঠিকভাবে ডাক্তার শামীমকে পাওয়া যায় না। তাকে পাওয়া গেলেও সে ঔষধ কোম্পানির (রিপ্রেজেনটেটিভ) লোকজন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, ঘন্টার পর ঘন্টা রোগীদের অপেক্ষায় থাকতে হয়।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টেস্টের অতিরিক্ত মূল্য মেটাতে দিশেহারা হয়ে পড়ছেন রোগীরা । বিভিন্ন টেষ্টের সরঞ্জাম ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের অথচ মূল্য নিচ্ছে তিন গুন। অগ্নি নির্বাহক কোন যন্ত্র নেই। অথচ ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থবছরে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের কোন অনুমোদন নেই। মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিস সেন্টার গত দুই মাস আগে অনুমোদনের আবেদন করে প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছে।  দালালরা স্থানীয় হওয়ায় রোগীরা অসহায় হয়ে পড়ছে তাদের কাছে। অথচ তিন চার বছর আগেই পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন তাহলে কিভাবে প্রশাসনের নাকের ডগায় মেয়াদহীন এসব প্রতিষ্ঠান চলছে? এসব নিয়ে মাঝে মধ্যে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালদের ঝগড়া থেকে হাতাহাতির ঘঠনাও ঘঠছে।

গত ২৬/০৯/২০২০ ইং তারিখে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিস সেন্টার এর মধ্যে রোগী নিয়ে কলহের একপর্যায়ে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এর লোকজন গিয়ে মেডিকেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড ডায়াবেটিস সেন্টার এর ডেক্সটপ এর গ্লাস ভাংচুর করে। এ নিয়ে উভয়ই লালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।

গত  ২৬/০৮/২০২০, ১৯/০৯/২০২০ ও ২৬/০৯/২০২০ তারিখে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, রোগীরা গেটের সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে আছে, আর ডাক্তার শামীমুজ্জান শামীম ১০ থেকে ১২ জন রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়ে গল্প করছেন। সাংবাদিককে দেখে যে যার মতো ছুটে বেরিয়ে যায়। রোগী না দেখে, রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়ে কিসের গল্প করছেন ডাক্তারকে এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ইতস্তত হয়ে রোগী দেখা শুরু করেন। এব্যাপারে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যূতিকে অবগত করলেও রহস্য জনক কারনে উনি কোন পদক্ষেপ নেননি।

পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক সুলতানুজ্জামান টিপু বিএনপি পরিবারের হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার পরিবারের জামাই হওয়ায় কতৃপক্ষ পদক্ষেপ নিতে গড়িমসি করে সময় পার করছে  বলেন দাবী করেন ভূক্তভোগীরা ।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা বলেন, সামান্য কিছু হলেই উনি একগাদা টেস্ট লিখে বলেন এগুলো পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করে নিবেন । ভুক্তভোগীরা জানান, ডা: শামীম আমাদের বলেন, তিনি দুপুরের পর  পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসবেন । তিনি   নিয়মিত ঐ খানে রোগী দেখেন।  ডা: সাহেব আরো বলেন হাসপাতালে রোগী দেখার চাইতে ডায়াগনস্টিক সেন্টারেই রোগী বেশী ভালো করে দেখি । আপনার ঐ খানে আসবেন ।

এ বিষয়ে ডা: শামীম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আপনারা শুনছেন তা মিথ্যা ও বানোয়াট । একটি মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি । সিভিল সার্জন স্যারকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে ।

এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মুল বানীন দ্যুতি বলেন, বিষয়টির জানার পরে নাটোর সিভিল সার্জনকে অবগত করা হয়েছে ।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *