মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সরকারি কলেজের জন্য দশটি বিষয়ে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট ৪ হাজার জনবল নিয়োগে চলছে টাকার খেলা। গত ২৭ আগস্ট প্রায় ৬০ হাজার প্রার্থীর বাছাই প্রক্রিয়া হিসাবে লিখিত পরীক্ষা নেয়ার যৌক্তিক মনে করা হলেও নেয়া হয়েছে এমসিকিউ পরীক্ষা।
টাকার বিনিময়ে সরকারি কলেজগুলোতে নিয়োগ পেতে যাওয়া এই প্রদর্শকরাই পরবর্তীতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত হবেন। পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপকও হতে পারবেন তারা। যেহেতু শিক্ষা ক্যাডারে পার্শ্বপ্রবেশের সুযোগ রয়েছে। তাই শিক্ষা ক্যাডারের সৎ কর্মকর্তারা এই এমসিকিউ পরীক্ষা বাতিল করে আইবিএর অধীনে লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
জানা যায়, ৪ হাজার জনবল নিয়োগে পাঁচ সদস্যের কমিটির সভাপতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরী, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন করে কর্মকর্তা এর সদস্য।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২৪ আগষ্ট বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে নিচে গুলিবিদ্ধ হন ৪ হাজার জনবল নিয়োগ কমিটির এই সভাপতি। তিনি তখন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব পদে ছিলেন। বোর্ডে থাকা কালে অবৈধভাবে শত শত স্কুল ও কলেজের অনুমোদন দেয়ার অভিযোগ এখনও দুদকের তদন্তাধীন। ২০১৭ সালে সংঘটিত ওই গোলাগুলির ঘটনার রহস্য আজও অজানা।
এই সভাপতি যখন ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের সচিব ছিলেন তখন একটি বে সরকারী টেলিভিশনে ‘জিপিএ ফাইভ বিক্রির অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন সম্প্রচারিত হয়েছিল।’
নিয়োগের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩ সালে এই অধিদপ্তরে ১৯৬৫ জন জনবল নিয়োগের জন্য পরীক্ষার প্রশ্ন তৈরি করার ‘অবৈধ’ দায়িত্ব পেয়েছিলেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির কয়েকজন বিতর্কিত নেতা। তারা অধিদপ্তরের নিয়োগ কমিটির কেউ না হলেও তারাই প্রশ্ন তৈরি করেছিলেন। রাতে শিক্ষা অধিদপ্তরে সেই প্রশ্নপত্র ফটোকপি করা মাস্টাররোলের পিওনই সকালে সেই প্রশ্নে নিয়োগ পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এ নিয়োগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো। পত্র-পত্রিকায় এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রথমে স্থগিত ও পরে বাতিল হয় সেই পরীক্ষা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব এ এস মাহমুদের তদন্তের সুপারিশে পত্রিকায় প্রকাশিত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সেই পরীক্ষা চূড়ান্তভাবে বাতিল হয় এবং পরবর্তীতে নতুন করে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর অধীনে। এমন অভিজ্ঞতা থাকার পর কেন আবার বিশাল নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা? কেন তাদের অধীনে পরীক্ষা অনুষ্ঠান এবং ঢাকা বোর্ডে ফল তৈরি?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিয়োগ কমিটির একজন সদস্য গতকাল বুধবার জানান, ‘এই প্রদশর্করাই পরে শিক্ষা ক্যাডার হবেন। পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক পর্যন্ত হতে পারবেন। তাদের নিয়োগ কঠিন লিখিত পরীক্ষা হওয়ার পক্ষে আমি ছিলাম, কিন্তু পারিনি।’ পরীক্ষা বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এসআরও মানা হয়নি।
’তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষায় কয়েকজন জনবলকে নিয়োগ দেওয়ার পর বাতিল করতে হয়েছিলো। প্রার্থীরা বডি পরিবর্তন করেছিলেন।’
এব্যাপারে বিসিএস সমিতির নেতা ও পরিচালক প্রশাসন মোঃ শাহেদুল ইসলাম খবিরের সাথে মুঠো ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।