সরকারি চিকিৎসকরা অফিস সময়ে বেসরকারিতে কাজ করতে পারবেন না

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বেসরকারি স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের নানা অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করতে নতুন বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।  বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানিয়েছে। এগুলোর বাস্তবায়ন হলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠাগুলো স্বাস্থ্য সেবার নামে বিধিবহির্ভূতভাবে যে বাণিজ্য করে আসছে, তা রোধ হবে। 

স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বুধবার বলেছেন, সরকারিভাবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য সেবাসংক্রান্ত চিকিৎসা ফি, টেস্ট ফিসহ অন্যান্য ফিগুলো নির্ধারণ করে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে ক্যাটাগরিভিত্তিক নির্ধারণ করা হবে। মন্ত্রণালয় থেকে এ লক্ষ্যে কিছু দিনের মধ্যেই গঠন করা হবে একটি শক্তিশালী কমিটি যার রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আগামীতে প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিকের যেসব চার্জ হবে এবং তারা যে সেবা দেবেন, সেগুলোর মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হবে। হাসপাতাল মালিকদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে করা হবে সবকিছু।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন হাসপাতালের মান আলাদা, কোনো বড় হাসপাতাল বা ক্লিনিকে হয়তো অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। ফলে, ক্যাটাগরি নির্ধারণ করে দেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক, হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যে চার্জ নির্ধারণ করে দেয়া হবে সেগুলো প্রদর্শন করতে হবে। প্রতিটি সেবার মূল্য সুনির্দিষ্টভাবে বোর্ডে টানানো থাকবে, যা সরকারি হাসপাতালে আছে।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, ২৯ অক্টোবর সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জনস্বাস্থ্য-১ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব এবং টাস্কফোর্স কমিটির আহ্বায়ক মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে কমিটির একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয় যেখানে সর্বসম্মতভাবে ৪টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় :-

১. অফিস সময়ে সরকারি হাসপাতালের কোনো চিকিৎসক বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকতে পারবেন না। কোনো কারণে কর্মরত অবস্থায় থাকলে টাস্কফোর্স ও সংশ্লিষ্টদের অবগত করতে হবে। ২. হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব, ক্লিনিকগুলোতে লাইসেন্স নিবন্ধন নম্বর স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। ৩. টাস্কফোর্স কর্তৃক সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক পরিদর্শন/অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। ৪. এছাড়া ১৬ নভেম্বরের পর অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইসেন্স গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এছাড়াও,  এখন থেকে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলেই সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। রাজধানী ও এর আশপাশের বেসরকারি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়মিত মনিটরিংয়ে রাখতে ৩ সদস্য বিশিষ্ট ৫টি কমিটি করা হবে। নিয়মিত নির্দিষ্ট এলাকা পরিদর্শনের দায়িত্ব থাকবে প্রত্যেকটি কমিটির।

এসব বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, এগুলো ভালো উদ্যোগ এবং এগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া ঠিক করা প্রয়োজন। তাছাড়া এসব বাস্তবায়নের জন্য আইনগত ও নৈতিক ভিত্তি থাকতে হবে। ফলে গৃহীত এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের পথে বাধার সম্মুখীন হবে না। তিনি বলেন, মূল্য তালিকা বা লাইসেন্স প্রদর্শনের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূল্য তালিকা অনুযায়ী সেবা বাস্তবায়ন এবং প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নিয়মিত নবায়ন নিশ্চিত করা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *