সুবিধাবঞ্চিতদের মুখের হাসিই যাদের প্রাপ্তি

দেশের অসুখে এগিয়ে আসা মানুষের বেশিরভাগই তরুণ সমাজ।যারা কোনোরূপ স্বার্থের বাইরে থেকে সমাজের জন্য সমাজের মানুষের জন্য বুক চিতিয়ে এগিয়ে আসে অথচ এই সমাজই তাদের তাচ্ছিল্য করে।

বাংলায় একটি অতি প্রচলিত প্রবাদ আছে ‘নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো’ যা এই তরুণদের জন্য নিয়মিতই ব্যবহার হয়ে থাকে। পরিবার ও সমাজের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করা তরুণরাই দেশের কান্ডারি হয়ে উঠে। এমনই একদল তরুণ সমাজের হাসি ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করে চলেছে অবিরাম। আর এই চেষ্টার ফসল হিসাবে সৃষ্টি হয়েছে ‘হাসিমুখ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন’।

হাসিমুখ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশন-এর সৃষ্টি এবং হাসি ছড়িয়ে দেবার গল্প নিয়ে মর্নিং নিউজ বিডির বিশেষ প্রতিবেদক স্টার্লিং ডি মামুনের সাথে আলাপচারিতায় তুলে ধরেন সংগঠনটির সভাপতি আকরাম হোসাইন তাহসিন।এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক-মোস্তফা হাসান হৃদয় ও সাংগঠনিক সম্পাদক, মাহমুদা মিমি।

সমাজের সুবিধাবঞ্চিত অসহায় মানুষের মলিন মুখে এক চিলতে হাসি ফোটানোর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে ২০১৭ সালের ১০ সেপ্টেম্বর হাসিমুখ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের যাত্রা শুরু হয়। সংগঠনের সদস্যরা অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে স্বেচ্ছায় কাজ করে যাচ্ছে হাসিমুখেই। তাদের এই কর্মযজ্ঞ শুরুতে ময়মনসিংহ থেকে শুরু করলেও ধীরে ধীরে ঢাকা, গাজীপুর, চাঁদপুর, কুষ্টিয়া এবং মাগুরা জেলায় বিস্তৃতি পেয়েছে। এসকল জেলার সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে গ্রহণ করেছে নানাবিধ উদ্যোগ।সংগঠনের গৃহিত উদ্যোগসমূহকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রক্তদান এবং সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন নামের পৃথক চারটি বিভাগে বিভক্ত করে পরিচালনা করা হয়ে থাকে।

হাসিমুখ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আকরাম হোসাইন তাহসিন বলেন, আমরা শিক্ষা বিভাগের আওতায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা সহায়তা (শিক্ষা উপকরণ, ভর্তি খরচ, পড়াশোনার খরচ), রক্তদান বিভাগের আওতায় মুমূর্ষু রোগীদের রক্তদান ও রক্তের ব্যবস্থা সহায়তা, স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় গরিব, অসহায় রোগীদের চিকিৎসার সহায়তা এবং সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী উন্নয়ন বিভাগের আওতায় সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী মানুষদের বিভিন্ন উৎসবে ও ক্রান্তিলগ্নে সহায়তা করে থাকে। ঈদে ঈদবস্ত্র, শীতের সময় শীতবস্ত্র, পহেলা বৈশাখ উদযাপন, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা উপকরণ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের স্কুলে ভর্তি করা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের মধ্য দিয়ে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করি।

সংগঠনটির কার্যক্রম পরিচালনার চ্যালেঞ্জসমূহ তুলে ধরে আকরাম হোসেন বলেন, “একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে রাজনীতি মুক্ত রাখাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া প্রতিটি ইভেন্ট সুন্দরভাবে সম্পূর্ণ করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ যোগান দেওয়াটা বরাবরই চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা খুব ভালোভাবেই হয়ে উঠে। আর বাধা বলতে গেলে আছেই। আপনি ভালো কাজ করতে গেলে অটোমেটিক শত্রু তৈরী হয়ে যাবে। হেটার্স তৈরী হবে। যারা নিজেরা কিছু না করে অন্যের কাজে প্রবলেম ক্রিয়েট করবে। তবে আমরা সবসময় সেসব গুরুত্বের সাথে নেই না। নিজেদের কাজকে যথেষ্ট স্বচ্ছ রাখার চেষ্টা করি।”

মানুষকে নিয়ে কাজ করার উপলব্ধির ব্যাপারে স্বপ্নবাজ এই তরুণ সংগঠক বলেন,উপলব্ধির চাইতে বড় ব্যাপার হলো দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ। তবে হ্যাঁ, অসহায় মানুষের জন্য কাজ করে চমৎকার আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়। যা অন্যকোনো কাজে নেই।

আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সচেতনতা তৈরী ও নারীদের উন্নয়নে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন তাহসিন।তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় সহযোগীতা আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়তো স্বপ্নবাজ এই তরুণদের দেশ নিয়ে দেখা স্বপ্ন গুলো পূরণ করতে পারবো আমরা৷ যা হবে একুশ শতকের বাংলাদেশকে স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অন্যতম সহায়ক।

Spread the love

২ thoughts on “সুবিধাবঞ্চিতদের মুখের হাসিই যাদের প্রাপ্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *