তৌহিদ হৃদয় সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে উড়েই চলেছে। রাজা রাজার মতোই ছোবল দিয়েছে। হৃদয়ের ব্যাটের উপর ভর করে পরপর চার ম্যাচ জিতল সিলেট স্ট্রাইকার্স। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে সিলেটকে চতুর্থ জয় এনে দিলেন নবীন ক্রিকেটার তৌহিদ হৃদয়। মিরপুরে মঙ্গলবার প্রথম পর্বের শেষ ম্যাচে ৬২রানের বিশাল এক ব্যবধানে জিতেছে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটের উপর ভর করে ২০১রানের পাহাড়সম টার্গেট, ঢাকা সংগ্রহ করেছে মাত্র ১৩৯রান। ফিল্ডিংয়ের সময় মুক্তার আলি চোট পাওয়ায় ৯ম উইকেট পতনের পরপরই সিলেটের জয় নিশ্চিত হয়ে যায়।
মাশরাফি মর্তুজার দল ছাড়া কোন দলই অতিক্রম করতে পারেনি এই রেকর্ড। পরপর চার ম্যাচে চার জয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। উল্লেখ্য যে, আর কোনো দল এখনো পর্যন্ত একাধিক জয় পায়নি।
তৌহিদ হৃদয় করেছেন তার ক্যারিয়ারের টানা তৃতীয় ফিফটি। ৪৬বলের ইনিংসে পাঁচটি করে ছক্কা ও চারে করেছেন ৮৪রান। ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানই জিতেছেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার। এই নিয়ে বিপিএল টুর্নামেন্টে টানা তৃতীয়বার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুইজন পার্টনারশিপে দলের ভিত গড়েছেন শান্ত ও হৃদয়। দুজনেরই ফিফটিতে এবারের আসরের প্রথম দুইশত রান করে সিলেট। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ হারিস ফিরে যাওয়ার পর এই দুই তরুণ মিলে করেন ৮৮রানের এক বিশাল জুটি। ৬ চার ও ২ ছয়ে ৩৬ বলে পঞ্চাশে পৌঁছান শান্ত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের নবম ফিফটিকে বেশি দূর নিতে পারেননি জাতীয় দলের এই বাঁহাতি ওপেনার। তিন উইকেট পাওয়া আল-আমিন হোসেনের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৫৭রান করে।
নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যাচ আউট হয়ে ফেরার পর সিলেটের ইনিংসের দায়িত্ব নেন হৃদয়। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দলকে নিয়ে যান ঢাকার সাফল্যের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফিফটি করতে তিনি নেন মাত্র ৩২বল, যেখানে ৫চারের সঙ্গে ছিল একটি ছয়ও।
বাংলাদেশের প্রিমিয়ার লিগ বিপিএলে টানা তিন ম্যাচে অর্ধশত রান করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হলেন ২২বছর বয়সী ব্যাটসম্যান তৌহিদ হৃদয়। ২০১৬সালের আসরে চিটাগং ভাইকিংসের হয়ে পরপর তিন ম্যাচে তিন ফিফটি করেছিলেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল খান।
তৌহিদ হৃদয় ফিফটি করার পর মাত্র ১৪বলে করেন ৩৪রান। আল-আমিনের করা শেষ ওভারের প্রথম বলে নিজের ইনিংসের পঞ্চম ছক্কা মারেন তিনি। তবে পরের বলেই ডিপ পয়েন্টে দিলশানের হাতে ক্যাছাউট যান এই ব্যাটসম্যান।
দ্বিতীয় ইনিংসে ঢাকা ব্যাটে নেমে রান তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই বাউন্ডারি মারেন ওপেনার দিলশান। তবু শুরুটা একদমই ভালো করতে পারিনি ঢাকা। পাওয়ার প্লেতেই ৩উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন তারা। দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটসম্যান আহমেদ শেহজাদের পর সৌম্য সরকারকেও ক্যাচ আউট করেন ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। পাহাড় সম অভিজ্ঞতার সমন্বয়ের এই পেসারের স্লোয়ারে পরাস্ত হন ঢাকার দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানস। অন্যদিকে মোঃ আমির আউট করেন মুনাভিরাকে।
কিন্তু তারপরেও হাল ছেড়ে দেয়নি ঢাকা। অতঃপর চতুর্থ উইকেট জুটিতে মাত্র ৭.৪ওভারে ৭৭ ্রান যোগ করেন মোহাম্মদ মিঠুন ও অধিনায়ক নাসির হোসেন। এই দুজন উইকেটে এক মহাজুটি বাঁধে এবং সম্ভাবনা দেখায় তরীকে তীরে ভেড়ানোর। এইদুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে না পারলে অবশেষে আর সিলেটের কাছাকাছিও যাওয়া হয়নি ক্যাপ্টেন নাসিরের। থিসারা পেরেরার বলে ক্যাচ আউট হওয়া মিঠুন ২৮বলে করেন অনবদ্য ৪২রান যেখানে ইনিংস টি ছিল ৩চার ও ২ছয়ের। ক্যাপ্টেন নাসির রাজার বলে কট বিহাইন্ড হন ৪৪রান করে। তার ৩৫বলের ইনিংসটি সাজানো ছিল পাঁচটি চায় ও একটি ছয় এ। এরপর বেশিদূর আর আগাতে পারিনি ঢাকার ইনিংসটা। হৃদয় ফিল্ডিং করছিলেন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে এবং নাসিরের সজোরে খেলা কাট শট ঠেকাতে গিয়ে আঙুলে চোট পান তিনি। তার আঙ্গুলে আপাতত ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট স্ট্রাইকার্স: ২০ ওভার _ ২০১/৮ (হারিস ৬, শান্ত ৫৭, হৃদয় ৮৪, জাকির ১০, মুশফিক ৬, থিসারা ১১, আকবর ৬, মাশরাফি ৭*, রাজা ০*। বোলিং: নাসির ২-০-২৩-০, তাসকিন ৪-০-৩৬-২, আলআমিন ৪-০-৪৫-৩, আরাফাত ২-০-১৩-১,মুনাভীরা ২-০-২৩-০, সৌম্য ৪-০-৪০-০, আরিফুল ২-০-১৯-১)
ঢাকা ডমিনেটর্স: ১৯.৩ ওভার_ ১৩৯/১০ (মুনাভীরা ১২, শেহজাদ ০, সৌম্য ৬, মিঠুন ৪২, নাসির হোসেন ৪৪, উসমান ১, আরিফুল ০, তাসকিন ১, আরাফাত ৯*, আল-আমিন ৬, মুক্তার_ আহত অনুপস্থিত। বোলিং: ইমাদ ৪-০-২৪-২ মাশরাফি ৩-০-১৪-২, আমির ৪-০-১৯-২, রাজা ৩-০-৪৫-১, থিসারা ৪-০-২৫-১, শান্ত ১.৩-০-৭-১) ।
ফলাফল: সিলেট স্ট্রাইকার্স ৬২ রানে জয়ী ।
ম্যান অব দা ম্যাচ : তৌহিদ হৃদয়