২০ হাজার টাকায় সন্তান বিক্রি করল মা : কারণ ঋণ পরিশোধ

ঋনের টাকা পরিশোধ করতে একদিনের সন্তানকে বিক্রী করে দিলেন বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম। হাসিনা বেগম আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের টেপারহাট গ্রামের জোকতার আলীর স্ত্রী। কিন্তু হাসিনা ছিল জোকতারের দ্বিতীয় স্ত্রী। বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় এক মেয়ে আর দুই ছেলের মা হাসিনা শেষ পর্যন্ত ঠাঁই পায় বাপের বাড়ি নয়াটারীতে। ছোট একটি ঝুঁপড়ি ঘরে দুই ছেলেকে নিয়ে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালান বুদ্ধি প্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম।

করোনাকালীন এই সংকটে অনাহারে-অর্ধাহারে সংসার চলছিল হাসিনা বেগমের। ধার-দেনা করে ঋণী হয়ে যান ১০,০০০ টাকার। এরই মাঝে গত মঙ্গলবার সকাল বেলা হাসিনা বেগম একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। সন্তান ভরনপোষনের দায় পিতা জোকতার আলী  না নেওয়াতে চিন্তায় পড়ে যান হাসিনা বেগম। তার এই চিন্তা নিবারণের জন্য হাসিনার ভাই কেরামত আলী বোনের সন্তানকে নিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে কিন্তু প্রতিবেশী অধির চন্দ্র তার শ্বশুর বাড়ি কুড়িগ্রাম রাজারহাট এলাকার এক জনৈক দম্পতিকে সন্তানটি দেওয়ার পরামর্শ দেন এতে বাধা দান করেন হাসিনা এবং তার বড় ছেলে হাসান।

অধীর চন্দ্র রাজারহাটের এ দম্পতির হাতে তুলে দিতে হাসিনার স্বামী জোকতার আলীকে ম্যানেজ করে ফেলে। পরে জোকতার জোরপূর্বক ছেলেকে বিক্রি করতে চাওয়ায় হাসিনার বড় ছেলে হাসান বাবাকে বাধা দিলে বাবার গালমন্দ, ত্যাজ্জ্ব করার হুমকিসহ মার খেতে হয় তাকে।

এ বিষয়ে বড় ভাই হাসান এর বক্তব্য ছোট ভাইকে রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ায় আমি বাড়ি ছেড়ে, হোটেলে কাজ নিয়েছে এবং সেখানেই থাকি । যদি ২০ হাজার টাকা পেতাম তাহলে অবশ্যই তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারতাম, কিন্তু টাকা নেই। আর এদিকে অর্থকষ্টে নবজাতক বিক্রি করে কান্না করছে অসহায় বুদ্ধিহীন মা।

এদিকে জোকতার আলী নিজের শিশু সন্তানকে বিক্রি করে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে। এর মধ্যে ১০ হাজার টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন হাসিনা বেগম কিন্তু নবজাতক ছোট্ট সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বুদ্ধিহীন এই মা।

বুদ্ধিপ্রতিবন্ধি হাসিনা বেগম বলেন, গরিব মানুষ খাবার পাই না। প্রতিবেশী অধিরের আত্নীয়ের কাছে দিয়েছি। তারা ভালভাবে দেখবে। আমাকে ২০ হাজার টাকা দিয়েছে। তার মধ্যে গতকাল ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি।

হাসিনার ভাই কেরামত আলী বলেন, বিয়ের ১০ বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের সংসারে সন্তান নেই। ইচ্ছা ছিল বোনের সন্তানকে নিতে। কিন্তু বোনের স্বামী টাকার বিনিময়ে নবজাতক ভাগিনাকে অন্যের হাতে তুলে দিয়েছেন।

স্থানীয় স্কুল শিক্ষক রোখসানারা মুক্তা বলেন, মুলত অভাবের কারনেই নবজাতককে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন হাসিনা বেগম। বিষয়টি প্রশাসনকে অবগত করেছি। তাকে আর্থিক সহায়তা করলে মাতৃত্ব বিক্রি করতে হতো না।

এ বিষয়ে সারপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি এক ইউপি সদস্যের মাধ্যমে জানতে পেরেছি, যে সন্তান বিক্রি করেছেন সে একজন প্রতিবন্ধী মা। ন্যায রায় পাওয়া যাবে বলে আশা করছি আমরা।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *