মোংলা বন্দরে করোনার প্রভাব পড়েনি, বাড়ছে আমদানি রফতানি

করোনাভাইরাসের প্রভাব দেশের  অন্যান্য সমুদ্র ও স্থল বন্দরে পড়লেও মোংলা বন্দর ছিল ব্যতিক্রম। মার্চ মাসের শুরুর দিকে সারাদেশে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মার্চের ২৬ তারিখ থেকে সাধারন ছুটি ঘোষনা করে সরকার। ফলে দেশের অধিকাংশ বন্দরের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। প্রথম দিকে জাহাজ আগমণ ও পণ্য লোডিং-আনলোডিং কাজ কিছুটা কমে গেলেও এখন সব ধকল সামলে নিয়েছে বন্দরটি। বর্তমানে বন্দরে বেড়েছে কর্মচাঞ্চল্যতা। বেড়েছে অপারেশনাল কার্যক্রম। আমদানি- রফতানি কার্যক্রমও  স্বাভাবিক রয়েছে।

কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ বন্দরের আয় সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছাবে।

একাধিক সূত্র জানায়, করোনার প্রভাব মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারিভাবে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি সীমিত করায় নানা শঙ্কার মধ্যে পড়েন মোংলা বন্দর ব্যবহারকারীরা। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাবের প্রথম দিকে এ বন্দরে জাহাজ আগমণ ও পণ্য খালাস-বোঝাই কাজে কিছুটা প্রভাব পড়লেও ধীরে ধীরে তা কেটে গিয়ে বন্দর বর্তমানে কর্মচঞ্চল হয়ে পড়েছে। বন্দরে এখন গড়ে প্রতিদিন ১০/১১টি জাহাজের অবস্থান থাকছে।

বন্দরের ট্রাফিক বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১০০টি জাহাজ ভেড়ে বন্দরে এবং ১২ লাখ ৯৬ হাজার মেট্রিক টন আমদানি ও ১৪ হাজার ২৩৬ টন পণ্য এ বন্দর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ৭০টি জাহাজ আসে বন্দরে এবং ৯ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও রফতানি হয় ১১ হাজার ৫৩৯ মেট্রিক টন পণ্য।

মার্চ মাসে ৭৩টি পণ্যবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ ভেড়ে এবং ১০ লাখ ৮৪ হাজার ৬৪৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও ৭ হাজার ৬২১ মেট্রিক টন পণ্য বিদেশে রফতানি হয়েছে। এপ্রিল মাসেও ৭১টি দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন ও নির্গমনসহ ৮ লাখ ৬৯ হাজার মেট্রিক টন সার, গম, কয়লা, কিংকার, সিরামিকসহ কনটেইনারজাত নানা পণ্য আমাদানি হয় এ বন্দরে।

একই সঙ্গে হিমায়িত চিংড়ি ও পাটজাতসহ বিভিন্ন পণ্য বিশ্ব বাজারে রফতানি হয়েছে ৭১৯ মেট্রিক টন। এছাড়া চলতি অর্থ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বন্দরে রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছে ১১ হাজার ৭৪৭টি। কিন্ত আমদানির ক্ষেত্রে কিছুটা হ্রাস পেয়েছে কনটেইনারজাত পণ্য, রিকন্ডিশন গাড়ি ও মেশিনারিজসহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী।

সূত্র আরও জানায়, সব মিলিয়ে চলতি অর্থ বছরের (২০১৯-২০২০) এপ্রিল পর্যন্ত মোংলা বন্দরে ৯৯ লাখ ৬১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য আমদানি ও রফতানি হয়েছে। এ সময় বন্দরের মোট আয় হয়েছে ২৮৩ কোটি টাকা। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছর আমদানি-রফতানির পরিমান ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ মেট্রিক টন পণ্য। রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানি হয়েছিল ১২ হাজার ৬৯৫টি।

মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ও মেসার্স নুরু এন্ড সন্সের মালিক এইচ এম দুলাল জানান, কর্তৃপক্ষ সঠিক ভাবে বন্দর পরিচালনা করার জন্য বন্দরে বিরূপ প্রভাব পড়েনি। বন্দর ব্যবহারে তিনি সন্তুষ্ট।

আরও পড়ুন: গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য খুললো ইউরোপের দরজা

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বর্তমানে বন্দর জেটিতে আমদানি ও রফতানি পণ্যসহ ৩ হাজার ৯০ একক কনটেইনার রয়েছে। তবে  রিকন্ডিশন গাড়ির ধারণক্ষমতা কাছাকাছি হওয়ায় দ্রুত গাড়ি ছাড়িয়ে নিতে বলা হয়েছে।’

তিনি আরও জানান, গত অর্থবছরে এ বন্দরের আয় হয়েছিল ৩২৯ কোটি টাকা। তবে করোনা সংকটের পরও চলতি অর্থবছরও আয় এর কাছাকাছি পৌঁছাবে বলে আশাবাদী তিনি।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম শাহজাহান বলেন, করোনার কোন প্রভাবই মোংলা বন্দরে পড়েনি। বন্দর কর্তৃপক্ষের সুদক্ষ ব্যবস্থাপনার কারনেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে মোংলা বন্দরে জাহাজ জট, কনটেইনার জট কোনটাই নেই। আমদানি রফতানি কার্যক্রমও আস্তে আস্তে বাড়তে শুরু করেছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *