স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে বরাদ্দ বৃদ্ধিসহ ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার ব্যয়সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৯ মে) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ অনুমোদন দেয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভাপতিত্ব করেন।
সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, এনইসি সভায় ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য প্রায় ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার ব্যয় সংবলিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের ৮৯টি প্রকল্পে প্রায় ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকার এডিপিও অনুমোদন করেছে এনইসি।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অনুমোদিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৭০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা আসবে। ২০২০-২১ অর্থবছরে এডিপির আওতায় ১ হাজার ৫৮৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হবে। এসব প্রকল্পের মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ৪৫৬টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১২৭টি এবং জেডিসিএফ অর্থায়িত প্রকল্প একটি।
এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ৮৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ৯ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এ টাকার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা আসবে। ফলে করপোরেশনের ব্যয় ও প্রকল্পসহ মোট ১ হাজার ৬৭৩টি প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তাসহ এডিপির সর্বমোট আকার দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬১১ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আরও বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় স্বাস্থ্য খাতে ২ হাজার ৯২৪ কোটি এবং কৃষি খাতে ১ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয়তা, সক্ষমতা, দূরদর্শিতা এবং চাওয়ার সক্ষমতা বিবেচনা করেই যে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা আমাদের বিবেচনায় সর্বোচ্চ।
এম এ মান্নান বলেন, গতকালের মিটিংয়ে স্বাস্থ্য খাতের মন্ত্রী কিংবা সচিব বরাদ্দ আরো না চাইলেও প্রধানমন্ত্রী এ খাতে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন এবং কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে কার্যকর, সম্ভাব্য প্রকল্প নিয়ে এলে তা দ্রুত অনুমোদন দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কৃষি ও স্বাস্থ্যখাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ দুটি খাতে কার্যকর, সম্ভাব্য ও সময় উপযোগী প্রকল্প এলে তা দ্রুত অনুমোদন প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেছেন, স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের প্রকল্প উন্মুক্ত রাখতে হবে। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি কমিয়ে গতি বাড়াতে হবে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এডিপির মোট বরাদ্দের প্রায় ৭৫.২ শতাংশ শীর্ষ ১০ বিভাগ বা মন্ত্রণালয়ে যাচ্ছে। যার পরিমাণ ১ লাখ ৫৪ হাজার ২০৫ কোটি টকার বেশি। চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এর পরই রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে ২৪ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিভাগে ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে ১৭ হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা।
এছাড়া রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ১২ হাজার ৪৯১ কোটি, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে ১০ হাজার ৫৪ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগে ৯ হাজার ৮৬৫ কোটি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৯ হাজার ৪০৪ কোটি, সেতু বিভাগে ৭ হাজার ৯৭৩ কোটি ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত এডিপিতে পরিবহণ-খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এ খাতে প্রায় ৫২ হাজার ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। পরিবহনের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন। এ খাতে প্রায় ২৫ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ। বিদ্যুৎ খাতে প্রায় ২৪ হাজার ৮০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ১২ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে প্রায় ২৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা বা মোট বরাদ্দের ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ, গ্রামীণ অর্থনীতি তথা পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান প্রায় ১৫ হাজার ৫৫৫ কোটি বা মোট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এছাড়া স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে প্রায় ১৩ হাজার ৩৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, কৃষি খাতে প্রায় ৮ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, পানি সম্পদ খাতে প্রায় ৫ হাজার ৫২৭ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং জনপ্রশাসন খাতে প্রায় ৪ হাজার ৪৮ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১ দশমিক ৯৭ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে মোট এডিপির ৯৩ দশমিক ১৯ শতাংশই যাচ্ছে শীর্ষ এ ১০টি খাতে।
সভায় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি), পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।