পাহাড় বেষ্টিত চট্টগ্রাম নগরী প্রাকৃতিকভাবে বিমোহিত সৌন্দর্যের অধিকারী হলেও বর্ষার শুরুতে প্রতিবছর এই পাহাড়ের কারনে এক গভীর শঙ্কার মুখোমুখি হতে হয়। পাহাড় ধসের শঙ্কা!
গত দিন দুয়েক ধরে বন্দরনগরীর আকাশ বিরতিহীনভাবে কেঁদেই চলেছে। ঝরছে অঝোর ধারায় বর্ষণ। যার প্রেক্ষিতে ভূমিধসের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে ক্রমশই।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আকাশ মেঘলা থেকে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। সে সাথে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়ার সাথে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সাথে দিবাগত রাত ১২টার পর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন আবহাওয়া অফিস।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা পুঞ্জিভূত হওয়ায় এবং মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রামের এই অবিরাম বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার সম্ভাবণা প্রখর বলে জানাচ্ছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস। এ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পরিমাপ রেকর্ড হয়েছে ৫৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার।
সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। দিনের ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ থেকে ১৫ কিলোমিটার বেগে, যা অস্থায়ীভাবে ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রবাহিত হতে পারে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারি আবহওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল মর্নিং নিউজ বিডিকে বলেন, ‘মধ্যরাত ৩টা থেকে ভোর ৪ থেকে ৫টা পর্যন্ত ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। ওই সময়ে প্রতি ঘন্টায় ৭ থেকে ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হতে পারে। টানা ভারি বর্ষণের কারণে পাহাড়ি এলাকায় ভোররাতের দিকে পাহাড় ধসের অনেক সম্ভাবনা রয়েছে।’
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণে নিষেধ করা হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের শঙ্কায় নগরে পাহাড়ের পাদদেশে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বাস করা লোকজনকে সরে যেতে দ্বিতীয় দিনের মতো মাইকিং অব্যাহত রেখেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। খোলা হয়েছে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম জানান, ‘নগরে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭টি পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা লোকজনকে সরে যেতে আমরা মাইকিং অব্যাহত রেখেছি।’
বাকলিয়া, চান্দগাঁও, সদর, কাট্টলী এবং আগ্রাবাদ সার্কেলের এইসব পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বাস করা লোকজন যাতে এই সময়ে ভোগান্তিতে না পড়েন সে জন্য ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানায় নির্বাহী মেজিস্ট্রেট তৌহিদুল।