নভেল করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে বিশ্ব পুঁজিবাজারের মতো ভারতের বাজারেও নাজুক অবস্থা। করোনার কোপে রোজই নতুন নতুন ধাক্কা লাগছে এই বাজারে। সূচক কিছুতেই থিতু হতে পারছে না।কিন্তু এমন পরিস্থিতির মধ্যে বেশ উল্টো ছবিও উঠে আসছে। অর্থনীতি ও পুঁজিবাজারের গ্রাফ যখন নিম্নমুখী, তখন বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীর ঢল নেমেছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সার্ভিসেস (ইন্ডিয়া) লিমিটেড বা সিডিএসএল বিনিয়োগকারী বৃদ্ধি সংক্রান্ত চমকপ্রদ এই তথ্য জানিয়েছে।সংস্থাটির দেওয়া তথ্য অনুসারে,গত দু’মাসে বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেড়েছে ১০ লাখের বেশি। খবর আনন্দবাজারের।
সিডিএসএল সূত্রে জানা গিয়েছে,গত মার্চ এবং এপ্রিল,এই দু’মাসেই প্রায় ১২ লাখ নতুন ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট (বাংলাদেশে যেগুলোকে বলা হয় বিও অ্যাকাউন্ট)খোলা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম দু’মাসে,তথা জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নতুন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল এর থেকে অনেকটাই কম,৯ লাখের মতো।অর্থাৎ করোনার সংকট চলাকালীন সময়ে মাসে গড়ে বিনিয়োগকারী বেড়েছে প্রায় দেড় লাখ।
এমন দুর্যোগকালীন সময়ে যখন বাজারে চরম অস্থিরতা তখন নতুন বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়ছে কেন? এর পিছনে নানা কারণ খুঁজে পেয়েছেন শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞরা। করোনাভাইরাসের আক্রমণের হাত থেকে বাঁচতে লকডাউনকে ঢাল করেছে ভারত-সহ বহু দেশ। লকডাউনের জেরেই ব্যবসা বন্ধ। ফলে যোগান ও চাহিদার মধ্যে ফারাকটা বেড়েই চলেছে। ব্যবসা বন্ধের প্রভাব গিয়ে পড়ছে শেয়ার বাজারেও। অনেকটা পড়েছে সেনসেক্স সূচক।
পরিসংখ্যান বলছে, গত জানুয়ারি মাসে যে শিখরে উঠেছিল সেনসেক্স তার থেকে এই লকডাউনের সময়ে অন্তত ২৬ শতাংশ পড়ে গিয়েছে সূচক। ফলে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারের দামও অনেক সস্তা হয়েছে। বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের সময় প্রধানত বাজারে ঝুঁকি কতটা,সে দিকে নজর দিয়ে থাকেন। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকির মাত্রাও অনেক কমে গিয়েছে। আর এই সুযোগ পুরোদমে ব্যবহার করতে চাইছেন বিনিয়োগকারীরা।
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের সংখ্যা বাড়ার কারণ হিসাবে জড়িয়ে আছে অন্য শর্তও। লকডাউনের সময় বাড়ি থেকে অফিসের কাজ করছেন বহু মানুষ। বাইরে না বেরনোয় অনেকেই প্রতি মাসের শেষে কিছুটা বাড়তি টাকা জমাচ্ছেন। সেইসঙ্গে অনেকটা সময়ও বাঁচছে। বাড়তি অর্থ এবং সময় এই দুই-ই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করছেন অনেকে। একটি ব্রোকিং সংস্থার কর্তা নিতিন কামাথের মতে, ‘কর্মীরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম-এর সুবিধা পাচ্ছেন,যা তাঁরা আগে পেতেন না। সেইসঙ্গে শেয়ারের দাম কমায় অনেকেই মনে করছেন সস্তা শেয়ার কেনার এটাই সময়।‘
ঝুঁকে পড়েছে শেয়ার বাজার। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা শুধু মাত্র যে ভারতের বাজারেই বাড়ছে এমন নয়। আমেরিকায় কার্যত ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে করোনা। সারা দেশে সাড়ে ১৪ লক্ষের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৮৯ হাজারের বেশি মানুষের। আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে রোজই হু হু করে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। এই পরিস্থিতিতেও আমেরিকার ই ট্রেড ফিনান্সিয়াল কর্প, টিডি আমেরিট্রেড হোল্ডিং কর্প এবং চার্লস সোয়াব কর্প-এর মতো ব্রোকিং সংস্থাগুলিতে রেকর্ড সংখ্যক নতুন বিনিয়োগকারী নাম লিখিয়েছেন গত মার্চেই। একই প্রবণতা দেখা গিয়েছে সিঙ্গাপুর ও ফিলিপিন্সের বাজারেও।