করোনায় নতুন করে দরিদ্র দেড় কোটি মানুষ: বিআইডিএসের গবেষণা

করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় দেশে দীর্ঘ মেয়াদে ছুটি এবং লকডাউনের ফলে সাধারণ মানুষের আয় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির এ মাত্রা যদি মধ্যম মানের ধরা হয় সেক্ষেত্রে দেশে নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। আর যদি আয়ে ক্ষতির সর্বোচ্চ সীমা ধরা হয় সেক্ষেত্রে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নতুন করে বাড়বে ৩ কোটি ৫৪ লাখ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণায় এমন তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি, এর প্রভাব ও এর মোকাবিলা বিষয়ে ভার্চুয়াল সংলাপের আয়োজন করে বিআইডিএস।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কে এ এস মুর্শিদের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন যুক্তরাজ্যের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এস আর ওসমানি, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মো. মোশতাক হোসেন, পরিকল্পনা সচিব আসাদুল ইসলাম। বিভিন্ন গবেষণার আলোকে উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন, গবেষক মঞ্জুর হোসেন, কাজী ইকবাল এবং নাহিয়ান আজাদ টুসি।

ড. বিনায়ক সেন বলেন, গত লকডাউনে দেশে ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে এসেছে। সাধারণ মানুষের আয় কমে যাওয়ার মধ্যমমান হিসাবে এই সংখ্যা পাওয়া গেছে। ২০১০ থেকে ২০১৬ মেয়াদে এসব এলাকায় দরিদ্র মানুষ বেড়েছে। করোনায় সরকার দরিদ্র মানুষের জন্য যে সহায়তা ঘোষণা করেছে সেটি দারিদ্র্যসীমার কাছাকাছি যারা আছে তাদের জন্য। কিন্তু যারা আগে থেকেই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে তারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ সময়ে। কোভিড-১৯ না থাকলে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের আগেই দারিদ্র্য বিমোচন করতে সক্ষম হতো। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দারিদ্র্য নির্মূল করতে হলে আগামী ১ দশক গড়ে ৮ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে।

দারিদ্র্য পরিস্থিতি বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের আরো অনেক বছর কাজ করতে হবে, বিষয়টি নিয়ে আমরা চিন্তিত। তবে করোনা মোকাবিলায় প্রথমদিকে আমাদের যে গ্যাপ ছিল সেটি কমে এসেছে। এসএমই খাতে প্রণোদনা বিষয়ে এক উপস্থাপনায় গবেষক মঞ্জুর হোসেন উল্লেখ করেন, দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ এসএমই উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে পারে। সহায়ক ডকুমেন্টের অভাবে এসএমই খাতে উদ্যোক্তারা ব্যাংকের ঋণ পায় না। তাদের জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা কতটুকু কাজে লাগবে সেটি দেখতে হবে। খেলাপি ঋণের বর্তমান অবস্থায় ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া ঠিক হবে না বলে তিনি মনে করেন।

গবেষক নাহিয়ান আজাদ টুসি অনলাইন জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলেন, ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, লকডাউনে তাদের আয় কমে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষের আয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্ন আয়ের ১৯ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের আয় ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে।

অধ্যাপক এস আর ওসমানি বলেন, এখন জিডিপিতে মনোযোগ দেওয়ার চেয়ে সাধারণ মানুষের জীবন মানের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। নগদ অর্থ পৌঁছিয়ে দরিদ্র হার কমানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *