ঝিনাইদহ-২ আসন, দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ, কাঠগড়ায় জনসেবা

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-২(ঝিনাইদহ সদর ও হরিণাকুন্ডু) আসনে দেশের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী ভোটযুদ্ধে নেমেছে। এরমধ্যে একজন হলেন, ভাষা সৈনিক ও বিশিষ্ট সমাজসেবক জাহিদ হোসেন মুসা মিয়ার সন্তান, দেশের প্রথম সারির ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেডিয়েন্ট বিজনেস কনসোর্টিয়াম লিমিটেডসহ দেশর স্বনামধন্য ১০শিল্প প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন। তার প্রতিক ঈগল। অপর হেভিওয়েট প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী। তিনি আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী হিসাবে নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তাহজিব আলম সিদ্দিকী গত দুই মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ২০১৪সালে স্বতন্ত্র এবং ২০১৮সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচিত হন। তার বাবা নূরে আলম সিদ্দিকী স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক, তুুখোড় রাজনীতিবিদ, মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও তৎকালীন যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য। নূরে আলম সিদ্দিকী ২০২৩সালে ২৯মার্চ রাজধানীর একটি বেসরকারী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

আসন্ন নির্বাচনে এ আসন থেকে মোট ১১জন প্রার্থী ভোট করছেন। এরমধ্যে ভোটারদের আলোচনায় দুই হ্যাভিওয়েট প্রার্থী দেশের স্বনামধন্য ব্যবসায়ী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী ও বর্তমান সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী। ভোট সামনে রেখে জনগণের কাঠগড়ায় আলোচিত হচ্ছে দুই প্রার্থীর মধ্যে জনসেবায় এগিয়ে কে। তবে, জনগণের সুখে দুঃখে যে পাশে থাকবে এবং জনসেবা যিনি এগিয়ে থাকবেন তাকেই ভোট দিবেন বলে মন্তব্য সাধারন ভোটারদের।

স্থানীয় ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নৌকার প্রার্থী তাহজিব আলম সিদ্দিকী গত দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য হিসাবে দ্বায়িত্ব পালন করলেও জনগণের নেতা হতে পারেননি। তিনি বেশির ভাগই সময়ই থেকেছেন রাজধানীতে। ফলে প্রয়োজনে তাকে কাছে পাননি এলাকার সাধারন মানুষ। এলাকায় থাকলেও তার সাথে কথা বলার সুযোগ নেই সাধারন নাগরিকদের। তার নির্ধারিত কিছু প্রতিনিধি ছাড়া তার সাথে দেখা করে কথা বলার সুযোগ অনেকটাই অসম্ভব। এদিকে উন্নয়নের প্রশ্নে নির্বাচনী এলাকার গ্ররুত্বপূর্ণ দু-একটি সড়ক বাদে রাস্তাঘাট, ব্রীজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ এলাকার উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেননি বলেও অভিযোগ উঠেছে এ সাংসদের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষ নাগরিকসেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছে প্রায় শতভাগ। রাস্তা, ব্রীজ-কালভাট ও সামাজিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করেননি বলেই ভোটাররা বলছেন। ২০২২সালের নভেম্বরে হরিণাকুন্ডু উপজেলার এক অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী বলেছিলেন, আগামিতে আমাকে ভোট দিলে আমি আপনারদের মন্ত্রিত্ব এনে দেব।

অন্যদিকে অপর হেভিওয়েট প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী নিজ প্রচেষ্টায় ব্যবসা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার শুরু থেকেই এলাকার মানুষকে কাছে রেখেছেন। তিনি এলাকার মানুষের বিপদে আপদে সহযোগীতা করে চলেছেন। বছরের দুই ঈদে ৩থেকে ৫হাজার গরু ছাগল জবাই করে চাল ডালসহ অন্যান্য সামগ্রী এলাকার সুবিধা বঞ্চিত মানুষের তালিকা করে তাদের ঘরে ঘরে পৌছে দিয়েছেন। জনসেবার এ কাজ তিনি দির্ঘ বছর ধরে করে আসছেন বলে জানিয়েছেন সাধারন ভোটররা। তার প্রতিষ্ঠত ১০শিল্প প্রতিষ্ঠানে নির্বাচনী এলাকার সহস্রাধিক নারী-পুরুষ চাকরী করছেন বলে জানান তারা। এছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ করেছেন তিনি।

রোববার ২৪ডিসেম্বর বিকালে হরিণাকুন্ডুতে নির্বাচনী প্রচারনায় গিয়ে নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আমি আজ খালি হাতে ভোট চাইতে এসেছি। আমি আপনাদের পাশে থেকে সহযোগীতা করার চেষ্টা করছি। আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে সহযোগীতা করবেন। আমি আজ চাইতে এসেছি, আমি আজ নিতে এসেছি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হরিণাকুন্ডুর উপজেলার একাধীক সাধারন ভোটার জানান, আমরা সাধারন মানুষ, আমাদের তেমন কিছু চাওয়ার নেই। আমরা চাই এলাকার রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন। এমপি নির্বাচিত হয়ে বিপদে আপদে সমাজের বঞ্চিত মানুষের পাশে দাড়িয়ে সাধ্যমত সহযোগিতা করুক। নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার মানুষের পাশে থাকুক। বর্তমান এমপি ১০বছর এমপি রয়েছেন। আমরা তার দেখা পায়নি। এলাকায় উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেননি। আমরা এখন তার মন্ত্রিত্ব দিয়ে কি করবো।

স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতিকের নাসের শাহরিয়ার জাহেদী বলেন, আমি প্রতিদিনই ভোটারদের কাছে যাচ্ছি। আমার কর্মী সমর্থকরা প্রচারনা করছেন। তবে, প্রতিদিনই আমাদের কর্মী সমর্তকদের উপর হামলা হচ্ছে। কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে আহত দুই সমর্থককে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আমি পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আহবান করবো, যারা সন্ত্রাস করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবেন। উৎসব মুখর পরিবেশে যেন ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হয় সে ব্যবস্থা করবেন। তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলে মানুষ কথায় কথায় মারামারি হানহানি করে। এখানে মানুষে মানুষের সম্পর্কে অবনতি চরম পর্যায়ে পৌছে। আমাদের সামাজিক অনুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। দল মানুষ করতে পারে। দল মত ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন ব্যহত না হয়। এটা করতে হলে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এটা সময় সাপেক্ষ ব্যপার। আগামিতে ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডুবাসিকে সাথে নিয়ে আমরা একটি সামাজিক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়ে একটি সুন্দর সুখি ও আন্তরিক বসবাসের জনপদ গড়ে তুলবো। যেখানে বড়রা ছোটদের স্নেহ করবে আর ছোটরা বড়দের সম্মান করবে। হানাহানির উর্দ্ধে উঠে যার যার পছন্দের দল করবে।

এ ব্যবপারে মন্তব্য জানতে সংসদ সদস্য তাহজিব আলম সিদ্দিকী ব্যক্তিগত মুঠোফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ না করে কেটে দেন। যে কারেন তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *