টাঙ্গাইলে ধলেশ্বরী নদীতে এক কিলোমিটারের মধ্যে ৫টি অবৈধ বাংলা ড্রেজার

টাঙ্গাইলের ধলেশ্বরী নদীতে অবৈধ বাংলা ড্রেজারের মহোৎসব বসেছে। সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চর ফতেপুর থেকে শ্যামার ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার নদী এলাকা জুড়ে ৫টি বাংলা ড্রেজারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সদ্য নির্মিত হওয়া শাম্যার ঘাট ব্রীজ এবং ১২০টি পরিবারের জন্য নবনির্মিত গুচ্ছ গ্রামের আবাসন প্রকল্পের ঘরগুলো।

ইতোমধ্যে বন্যায় ব্যাপক ভাঙন কবলিত হয়েছে এই ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো। ভাঙনে গ্রামবাসী হারিয়েছেন শত শত একর আবাদী জমি। ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বারসহ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ড্রেজারগুলো চলমান থাকায় প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছে না গ্রামবাসী। একইভাবে সদর উপজেলার বাঘিল ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর অংশেও চলমান রয়েছে একাধিক বাংলা ড্রেজার।

এলাকাবাসীর অভিযোগে জানা যায়, সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের চর ফতেপুর গ্রাম থেকে শ্যামার ঘাট পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার ধলেশ্বরী নদীর এলাকা জুড়ে অবাধে চলছে ৫টি বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন। বছর জুড়ে বালু উত্তোলন আর বিক্রি চলমান থাকলেও প্রশাসনের নেই কোন পদক্ষেপ। ইউনিয়নের ৭ নং ওয়াডের্র ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী ও তার ছেলে রুবেল ও কবির চাকলাদার এবং কালাম নামে এই চার বালু ব্যবসায়ী ধলেশ্বরী নদীর চর ফতেপুর এলাকায় চালাচ্ছে বালু উত্তোলন আর লিটন ও ফজলু নামের দুই বালু ব্যবসায়ী নদীর শ্যামার ঘাটে সদ্য নির্মিত ব্রীজের পাশ থেকেই অবৈধভাবে ড্রেজারে করছেন বালু উত্তোলন।

এছাড়াও বাঘিল ইউনিয়নের ব্যাপারী পাড়া গ্রামের ধলেশ্বরী নদীর অংশেও অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছেন সুখচাঁন, শাহজাহান, শফিকুল নামের আরোও তিনজন বালু ব্যবসায়ী। অবৈধ এই বালু ব্যবসায়ীরা নদীর আশেপাশে গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি ও পুকুর ভরাট করার চুক্তি নিচ্ছেন। স্থানীয় জুলহাস উদ্দিনসহ একাধিক গ্রামবাসীর অভিযোগ করেন, অবৈধ এই বাংলা ড্রেজারে বালু উত্তোলনের ফলে তাদের ফসলী জমি, বসতভিটা ও গাছপালা নদী ভাঙনের কবলে পরেছে। গত তিন বছর যাবৎ নিয়মিতভাবে অবৈধ এই ড্রেজার চললেও স্থায়ীভাবে বন্ধ করার কোন উদ্যোগ নেয়নি প্রশাসন। তবে মাঝে মাঝে পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন এসে ড্রেজারের পাইপ ভাংচুর করলেও পরদিন থেকেই আবার তা পুনরায় চালু হয়েছে এই ড্রেজার ব্যবসা। এভাবে নিয়মিত ড্রেজার চালু থাকায় দিনদিনই বাড়ছে নদীর আশেপাশের এলাকায় বসতবাড়ি ভাঙনের শঙ্কা। গ্রামবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন উপজেলায় ড্রেজার বন্ধে প্রশাসন নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও সদর উপজেলায় কেন নেয়া হচ্ছে না এ ধরণের কোন পদক্ষেপ। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে উঠেছে নানা প্রশ্ন। স্থায়ীভাবে বাংলা ড্রেজার বন্ধের দাবি জানান চরফতেপুরসহ ব্যাপারী পাড়ার গ্রামবাসীরা।

সরজমিনে দেখা গেছে, ৮০ হাজার টাকা চুক্তিতে শ্যামার ঘাট এলাকার সিদ্দিক ফকিরের বাড়ি ভরাটের কাজ নিয়েছেন লিটন ও ফজলু নামের দুই ড্রেজার ব্যবসায়ী। বক্তব্য নিতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী লিটন উত্তেজিত হয়ে বলেন, আমি বক্তব্য দিব কেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই করছেন এ বালু উত্তোলন আর বিক্রি। আপনেরা যত পারেন ভিডিও করেন, ছবি তুলেন কোন সমস্যা নাই। ব্রীজের পাশ থেকেই কেন এবং কার অনুমতিতে এই বালু উত্তোলন করছেন এ প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।

অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ী ও দাইন্যা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী বলেন, বর্তমানে ড্রেজার ব্যবসা পরিচালনা করছে আমার ছেলে রুবেল। অবৈধ হওয়ায় গত দুই বছর আমি ব্যবসা বন্ধ রাখি। তবে এখন অন্যেরা ব্যবসা করায় আমিও শুরু করেছি। সকলের ড্রেজার বন্ধ হলে আমি বন্ধ করে দিব।

সত্যতা নিশ্চিত করে দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান লাবলু মিয়া বলেন, ওয়ার্ড মেম্বার মোতালেব হোসেন মাদারী ও তার ছেলে রুবেল এবং কালামসহ বেশকয়েকজন নিয়মিত চালাচ্ছেন এই ড্রেজার ব্যবসা। আমি প্রতিনিয়ত প্রশাসনকে অবগত করার পরও বন্ধ হয়নি অবৈধ ড্রেজারে এই বালু উত্তোলন আর বিক্রি। বন্ধ না হওয়ার ফলে এ ইউনিয়নে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ড্রেজার ব্যবসায়ীর সংখ্যা।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাইদুল ইসলাম বলেন, কোন কোন এলাকায় এই ড্রেজার চলছে তা খোঁজ নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. আতাউল গণি বলেন, এসব বাংলা ড্রেজার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যেই আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই বাংলা ড্রেজার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে। সদর উপজেলায় কোন প্রকার বাংলা ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন কিংবা বিক্রি কোনটাই করতে দেয়া হবে না।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *