যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি গভীর সংকটে

গভীর সংকটে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। করোনাভাইরাসের কারণে উৎপাদন থেকে খুচরা বিক্রি, চাকরি থেকে তেল রপ্তানি- সব ক্ষেত্রেই একরকম টালমাটাল অবস্থা। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনৈতিক উপাত্ত বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বর্তমানে গভীর সংকটে রয়েছে। করোনা ভাইরাস রোধে আরোপিত লকডাউন তুলে নেয়া শুরু হয়েছে। তারপরও দেশটির অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। খবর এএফপি।

শুক্রবার (১৫ মে) প্রকাশিত এক উপাত্তে দেখা গেছে, বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে গত মাসে শিল্প উৎপাদনের যেমন রেকর্ড পতন হয়েছে। তেমনি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে দেশটির অর্থনীতির জন্য অতিগুরুত্বপূর্ণ খুচরা বিক্রি খাত।

মূলত করোনাভাইরাস যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে অভাবনীয় এক সংকট সৃষ্টি করেছে। দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছে ১৫ লাখের বেশি এবং মারা গেছে ৯০ হাজারের মতো মানুষ। এর মধ্যেই ভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ দেশটির অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে কার্যত বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

দেশটিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বেকারত্ব। কয়েক মাস আগেও যেসব মার্কিন নাগরিক নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে অবদান রাখছিলো। তারা এখন বেকার ভাতার জন্য আবেদন করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছে ৩ কোটি ৬৫ লাখ আমেরিকান। লকডাউন ঘোষণার পর মধ্য মার্চ থেকে প্রতি সপ্তাহে এ আবেদনের সংখ্যা বাড়ছে। যা দেশটির অর্থনীতির দুরবস্থার চিত্রই প্রকাশ করছে প্রতিনিয়ত।

অক্সফোর্ড ইকোনমিকস যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রির উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বলছে, পণ্য ক্রয়ে ক্রেতাদের বিমুখতা সত্যিই হতাশাজনক। ঊর্ধ্বগামী বেকারত্ব, উপার্জন কমে যাওয়া, ভঙ্গুর ভোক্তা মনোবল খুচরা বিক্রির ওপর ধারাবাহিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

বাণিজ্য বিভাগের প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, মার্কিন অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভোক্তাব্যয়। কিন্তু এপ্রিলে এ ব্যয়ের পতন হয়েছে ১৬ দশমিক ৪ শতাংশ, মাসিক হিসাবে দেশটির ভোক্তাব্যয়ে এর বেশি পতন আর কখনই দেখা যায়নি।

এক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে দোকানের ক্রেতানির্ভর ব্যবসা খাত। এর মধ্যে পোশাক বিক্রির পতন হয়েছে ৭৮ দশমিক ৮ শতাংশ। একইভাবে ইলেকট্রনিকস পণ্য ও আসবাব বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ৬০ দশমিক ৬ ও ৫৮ দশমিক ৭ শতাংশ। তবে এর বিপরীতে ব্যতিক্রম অনলাইন খুচরা বিক্রি। এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রে অনলাইনে এ বিক্রির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ।

গ্লোবাল ডাটা রিটেইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিল সন্ডার্স বলেন, সার্বিক বিবেচনায় খুচরা বিক্রির এ উপাত্ত খুবই উদ্বেগজনক। এ অবস্থায় মে কিংবা জুনেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার খুব একটা সম্ভাবনা নেই। সত্যি বলতে, তার পরের মাস জুলাই, এমনকি বছরের বাকি সময়েও খুচরা বিক্রির পূর্বাবস্থায় ফিরে আসা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

নিল সন্ডার্সের মতে, খুচরা বিক্রির উন্নতি হবে খুবই ধীরে, একটু একটু করে। তবে সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত, যখন সার্বিক বাণিজ্য খাত তার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করবে বলে আশা করা যায়।

এদিকে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প উৎপাদনেরও রেকর্ড পতন হয়েছে। মাসটিতে ফেডারেল রিজার্ভের ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রডাকশন ইনডেক্সের (আইপিআই) পতন হয়েছে ১১ দশমিক ২ শতাংশ, যা মাসিক হিসাবে ১০১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছে গাড়ি নির্মাণ খাতের ওপর। এপ্রিলে দেশটির গাড়ি নির্মাণে পতন হয়েছে ৭০ শতাংশেরও বেশি। এ সময় সার্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের উৎপাদন কমেছে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশ।

একইভাবে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির চাহিদা কমে যাওয়ায় ২৮ শতাংশ পতন হয়েছে তেল ও গ্যাস উত্তোলন কার্যক্রমের। ১৯৭২ সালের পর এ দুই খাতে এমন পতন আর হয়নি। পাশাপাশি প্রায় ২০ শতাংশ পতন হয়েছে প্রাথমিক ধাতু পণ্য, বিমান শিল্প, অন্যান্য পরিবহনসংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ নির্মাণ এবং আসবাব ও সংশ্লিষ্ট খাতের উৎপাদনেও।

দি ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্টের (আইএসএম) প্রকাশিত অর্থনৈতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাত লকডাউনের কারণে চলতি বছরের আয়ে মারাত্মক পতনের সম্মুখীন হবে। এক্ষেত্রে পুনরুদ্ধারের জন্য উভয় খাতকেই অপেক্ষা করতে হবে ২০২১ সাল পর্যন্ত। একই সঙ্গে উভয় খাতেরই বহু কোম্পানিকে আরো কর্মী ছাঁটাইয়ের পদক্ষেপ নিতে হতে পারে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *