কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি সামান্য কমলেও এখনও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এ অবস্থায় দিন যতই যাচ্ছে এক মাসেরও বেশি দীর্ঘ বন্যায় কষ্ট বেড়েই চলেছে জেলার ৪ শতাধিক চরের প্রায় ৪ লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের।
তীব্র হয়ে উঠছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের সংকট। কষ্ট বেড়েছে বাঁধ, পাকা সড়ক ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নেয়া বন্যা দুর্গতদের। সবচেয়ে বিপদে পড়েছে দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা। হাতে কাজ ও ঘরে খাবার না থাকায় এবং ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় চরম খাদ্য কষ্টে ভুগছেন তারা। মিলছে না সে ধারদেনাও। প্রখর হয়ে উঠছে শিশু ও গো খাদ্যের সংকট।
চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, আমার পুরো ইউনিয়ন পানিবন্দি। বন্যার্ত মানুষজন পরিবার পরিজন ও গবাদি পশু নিয়ে উঁচু সড়ক, নদীরক্ষা বাধ সহ বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বানভাসী মানুষগুলি রয়েছে চরম খাদ্য সংকটে। এছাড়াও রয়েছে গো-খাদ্য সংকট। নয়াবশ নামক একটি গ্রাম অত্যন্ত ঝুঁকি থাকায় সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গনের হাত থেকে গ্রামটিকে রক্ষার চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত যে সমস্ত সরকারি সহায়তা পেয়েছি তা খুবই অপ্রতুল। যা দিয়ে ৮-৯ হাজার বানভাসি মানুষের খাদ্য সংকট পূরন করা সম্ভব নয়।
চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর রাজ্জাক মিলন জানান, আমার ইউনিয়নে বন্যার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যায় আমনের বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গো-খাদ্যের সংকটের কারনে মানুষজন গবাদি পশু নিয়ে খুবই বিপাকে রয়েছেন। সবচেয়ে কষ্টে দিন পার করছেন খোলা আকাশের নীচে বসবাসকারী মানুষজন। তারা পাতলা পলিথিনের ছাউনিতে থাকার কারনে রাত দিন বৃষ্টিতে ভিজে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ আইয়ুব আলী সরকার জানান, আমার ইউনিয়নে বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও বানভাসী মানুষজনের দূর্ভোগ কমেনি। বন্যার্ত মানুষজন গবাদি পশু নিয়ে এখনও উঁচু সড়ক, নদী রক্ষা বাঁধ ও আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
আরও পড়ুন: নাটোরে মাছ ধরার লোভে বাঁধ ভেঙ্গে বন্যায় ভাসলো ১২ গ্রামের মানুষ
জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, জেলার ৯ উপজেলায় বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ১৯০ মেট্রিক টন চাল, ৯ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ, গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা ও ৮ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তাদের কাছে আরো ত্রাণের চাল ও টাকা মজুদ আছে। প্রয়োজনে সেগুলোও বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ২৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪১ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে ও তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ৫৯ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।