আজ ২১ ফেব্রুয়ারি। মহান ‘শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’। বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল একটি দিন। এই দিনে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন রফিক, সফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ আরও অনেকে। রক্তর জোয়ারে মাতৃভাষা আন্দোলনের ৬৯ বছর পূর্ণ হলো আজ।
বাঙালির সামাজিক-সাংস্কৃতিক চেতনা জাগ্রতের মূলে ছিল বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন। তমুদ্দুন মজলিশের উদ্যোগে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটে।
পরবর্তীকালে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদরা রক্ত দিয়ে বিশ্বের ইতিহাসে বাংলাকে নিয়ে যায় অনন্য স্থানে। সেই ভাষা শহীদদের প্রথম প্রহরে যথাযথ মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করছে সর্বস্তরের মানুষ।
শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় কড়া নিরাপত্তা নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ঘড়ির কাটা রাত ১২টা ১ মিনিট হলে শহীদ বেদীতে ফুল দেওয়া শুরু হয়।
মহামারি করোনার কারণে এবার রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্ব-শরীরে আসেননি। তাদের পক্ষে সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম ও মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে রাত ১২টা ১ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহউদ্দিন ইসলাম। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শ্রদ্ধা জানান তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী। এ সময় অমর একুশের কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…’ বাজানো হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শহীদদের ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে পাঁচ জ্যেষ্ঠ নেতা ফুল দেন। তাদের পর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে ফুল দেন জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস এম এম নাঈম রহমান।
এরপর পর্যায়ক্রমে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ শাহীন ইকবাল শহীদ মিনারে ফুল দেন। তাদের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, পুলিশের আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন ফুল দেন।
পরে আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতারা, সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জি এম কাদের, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস এবং বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। একই সাথে শহীদদের শ্রদ্ধা জানান হুইলচেয়ারে করে আসা একদল যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা।
একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে একে একে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের বেদি। পরে জনসাধারণের জন্য শহীদ মিনার উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।