অদৃশ্য এক শত্রুর আক্রমণে স্থবির জনজীবন, অচল অর্থনীতি, স্থবির শিক্ষাকাঠামো।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় গত ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। স্থগিত করা হয় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। কবে নাগাদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় শিক্ষা বোর্ড।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের নোটিশ থেকে জানা যায় ‘২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি’।
এর ফলে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে ঘুরপার খাচ্ছে প্রায় ১৩ লাখ পরীক্ষার্থী, দিন দিন হারিয়ে ফেলছে পড়ালেখার স্পৃহা।
এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ ৬ই অগাস্ট পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সময়ে বন্ধ থাকবে সকল প্রকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার কারণে থেমে গেছে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন, নেই সকালে ক্লাসে যাওয়ার তাড়া, চাপ নেই হোমওয়ার্ক সম্পন্ন করার।
অন্য বছরের ছুটি শিক্ষার্থীদের জন্য খুশির জোয়ার নিয়ে এলেও, এবারের ছুটি নিয়ে এসেছে অস্বস্তি, আতংক, অনিশ্চয়তা।
আসক্ত হয়ে যাওয়ার ভয়ে বাবা-মা সন্তানকে যে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করতো, তারাই এখন সন্তানের হাতে স্মার্টফোন তুলে দিচ্ছে অনলাইনে ক্লাস করার জন্য।
লকডাউনের মাঝে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলোতে ইন্টারনেট বা অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাদান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
সামর্থ্যবান বাবা-মা সন্তানের অনলাইন পড়ালেখা নিশ্চিত করতে পারলেও অনিশ্চয়তার মধ্যে দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীরা। যার ফলে একটি স্পষ্ট বৈষম্য ফুটে উঠছে সমাজের সামনে। প্রমাণ হয়ে যাচ্ছে শিক্ষা তুমি কার? অর্থ আছে যার…! যেখানে চাকরি বা আয়ের পথ বন্ধ হয়ে দুবেলা খাবার জোটানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে সেখানে অনলাইনে পড়ালেখা অনেকের কাছেই বিলাসিতার সামিল।
উল্লেখ্য, প্রতি বছরের মতো এবারের এসএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু করোনার তাণ্ডবে দুরাবস্থার কবলে প্রায় ১৭ লাখ এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীর জীবন। অধীর আগ্রহে কলেজ জীবন শুরর জন্য অপেক্ষা করলেও কেউ জানে না কবে শুরু হবে তাদের কলেজ জীবন, কবে বিশ্ব ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জেনেও হাল ছাড়েনি, কারণ শিক্ষার্থীরা জানে সুদিন আসবেই।