বাংলাদেশের উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়া শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের কারণে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও বন্দর কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দরে নিজস্ব সংকেত রেড অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে। জেটিতে অবস্থানরত জাহাজগুলোকে বন্দর সীমানা থেকে বের করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার (১৮ মে) বিকেল ৪টায় ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের পর এ অ্যালার্ট জারি করা হয়। রেড অ্যালার্ট ৩ জারির পর বন্দরে জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে এবং বন্দরের জেটি থেকে জাহাজ খালি করা হচ্ছে। এছাড়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফান মোকাবেলায় দুটি কন্টোল রুল চালু করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বিকেলে আবহাওয়া অফিস থেকে ৬ নম্বর সিগনাল জারির পর অ্যালার্ট-৩ জারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপরই জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানো-নামানোর কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। কুতুবদিয়া, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজারসহ বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজ রয়েছে ১৬০টি।তারমধ্যে জেটিতে ১৭টি জাহাজ ছিল। পণ্যখালাস শেষে দুটি চলে গেছে। এখন আছে ১৫টি জাহাজ। বর্হিনোঙ্গরে আছে ৬৭টি জাহাজ। মাদার ভ্যাসেলগুলোকে আমরা বের করে গভীর সাগরে পাঠিয়ে দেব। কারণ, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জেটিতে থাকা জাহাজে ব্যাপক আঘাত লাগে।এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণে জাহাজ জেটি থেকে কিছুটা দূরে সাগরে পাঠানো হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালের জোয়ারের সময়ই সেগুলো যেন বর্তমান অবস্থান থেকে সরে গভীর সাগরে চলে যায়, সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে। অভ্যন্তরীণ লাইটারেজ জাহাজগুলোকে কর্ণফুলী নদীতে শাহ আমানত সেতু এলাকায় অবস্থান নিতে বলা হয়েছে।
তিনি জানান, বন্দরের জেটিতে যেসব যন্ত্রপাতি এবং ইয়ার্ডে কনটেইনার আছে সেগুলোকে সুরক্ষিত রাখার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব জাহাজকে সার্বক্ষণিক ইঞ্জিন সচল রাখার এবং গভীর সাগরে নিরাপদ অবস্থানে চলে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
১৯৯২ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রণীত ঘূর্ণিঝড়-দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং ঘূর্ণিঝড়–পরবর্তী পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী, আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত অনুযায়ী চার ধরনের সতর্কতা জারি করে বন্দর। আবহাওয়া অধিদপ্তর ৩ নম্বর সংকেত জারি করলে বন্দর প্রথম পর্যায়ের সতর্কতা বা ‘অ্যালার্ট-১’ জারি করে। ৪ নম্বর সংকেতের জন্য বন্দর অ্যালার্ট-২ জারি এবং বিপৎসংকেত ৫, ৬ ও ৭ নম্বরের জন্য অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়। মহাবিপৎসংকেত ৮, ৯ ও ১০ হলে বন্দরেও সর্বোচ্চ সতর্কতা বা অ্যালার্ট-৪ জারি করা হয়।
এদিকে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাজহারুল ইসলাম জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরো উত্তর দিকে অগ্রসর হয়েছে। সোমবার বিকেল ৩ নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ১০৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিলো। মঙ্গলবার শেষ রাত নাগাদ এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা ও চট্টগ্রাম উপকূলের মাঝ দিয় অতিক্রম করতে পারে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের ৮৫কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ২১০ কিলোমিটার থাকবে, যেটি ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মংলা এবং পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরায় দ্বীপ এবং চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।