হালিশহরে চুন-সুড়কির মসজিদ, যেন মোগল স্থাপত্য

বারো আউলিয়ার পুণ্যভূমিখ্যাত চট্টগ্রামে পুরাতাত্ত্বিক কিছু স্মৃতিচিহ্ন আছে মসজিদকে ঘিরে। তবে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামের প্রাচীন সব স্থাপত্য নিদর্শন। মোগল আমলের তৈরি এমনই এক প্রাচীন স্থাপত্যের নাম আসগর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ।

চট্টগ্রামের উত্তর হালিশহরে প্রায় ২২৮বছর আগে নির্মিত মসজিদটির নাম ‘আস্‌গর আলী চৌধুরী জামে মসজিদ’। নির্মাণকৌশলের সবকিছুতে মোগল স্থাপত্যরীতির ছাপ রয়েছে মসজিদটিতে।যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে ২২৮থেকে ৭০০বছরের পুরোনো সুলতানি ও মোগল আমলের ঐতিহ্যের এসব স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট হতে বসেছে। মোগল আমলের তৈরি এমনই এক মসজিদ হচ্ছে উত্তর হালিশহরের চৌধুরীপাড়ায়। চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে সোজা পশ্চিমে তিন কিলোমিটার গেলেই হালিশহরের বড়পোল এলাকা। সেখান থেকে আরও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পশ্চিমে উত্তর হালিশহরের চৌধুরীপাড়া। এ পাড়াতেই ১৭৯৫খ্রিস্টাব্দে মোগল আমলের স্থাপত্য নকশায় চুন-সুড়কির তৈরি দৃষ্টিনন্দন মসজিদ গড়ে তুলেছেন প্রয়াত আসগর আলী চৌধুরী। বাণিজ্যিক দিক থেকে মূল্যবান এ এলাকায় প্রতি গণ্ডা জায়গার দাম প্রায় কোটি টাকা। কিন্তু ১০শতক জায়গায় তৈরি করা মসজিদটির সামনে আছে প্রায় ১০০শতক জায়গার উপর পুকুর। মসজিদের দক্ষিণে ২০শতক জায়গায় আছে কবরস্থান। উত্তরে ২৬শতক জায়গার ওপর আছে চৌধুরী পরিবারের প্রতিষ্ঠিত উত্তর হালিশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

প্রায় আড়াইশ’ বছর আগে মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল তাজমহলের আদলে। মসজিদের ছাদে শোভা পেয়েছে বড় তিনটি গম্বুজ ও ২৪টি মিনার। পোড়ামাটির রঙের এই মসজিদের চারপাশ সাজানো হয়েছে নানা রকম নকশা দিয়ে। শুধু বাইরের দেয়ালই নয়, ভেতরের দেয়াল ও কাঠামোজুড়ে মোগল স্মৃতিচিহ্ন প্রদর্শন করে যাচ্ছে চোখ-ধাঁধানো নানা রকম নকশা।

মজার ব্যাপার হলো, এই মসজিদে প্রচলিত কোনো জানালা নেই। মসজিদটি দেখতে দেশি-বিদেশি অনেক পর্যটক প্রতিদিন এখানে ভিড় জমায়। তবে আড়াইশ’ বছরের পুরনো মোগল আমলে তৈরি এ মসজিদটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে ২০১০সালের দিকে। ফলে ৫বছর আগে এলাকাবাসীর আগ্রহে পুরাতাত্ত্বিক এই নির্দশন না ভেঙে পেছনে ৭০শতক জায়গার ওপর সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন একটি মসজিদটি নির্মাণ করছেন চৌধুরী পরিবারের ওয়ারিশরা। মসজিদটিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনতে খরচ হয় ৫০লাখ টাকা। সংস্কার কাজটি করে ঢাকার প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আরবানা আর্কিটেক্ট। নতুন মসজিদের নকশাও নজর কাড়ছে দর্শনার্থীদের। নতুন মসজিদটি বানানো হয়েছে অনেকটা সংসদ ভবনের আদলে। মসজিদটির তিন পাশেই রাখা হয়েছে জলাধার। ওপর থেকে মনে হবে পানির ওপরই ভেসে আছে যেন আল্লাহর এই প্রিয় ঘর।

এ প্রসঙ্গে আসগর আলী চৌধুরী মসজিদ পরিচালনা কমিটির প্রধান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মোগল আমলে তৈরি এ মসজিদটি আগের আদলে ফিরিয়ে আনতে একমত হয়েছেন এলাকার সবাই। তাদের এ ইচ্ছাকে সম্মান জানাতে ৫০লাখ টাকা ব্যয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে পুরাতাত্ত্বিক এ নির্দশন। এলাকার কারও কাছ থেকে অর্থ না নিয়েই পুরনো আদলে মসজিদটির মূল অবকাঠামো সংস্কার করা হয়েছে। চুন-সুড়কি ও বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল দিয়ে এ সংস্কার কাজ করেছে ঢাকার আরবানা আর্কিটেক্ট গ্রুপ। এখন যেভাবে এটির সংস্কার হয়েছে, তাতে আরও ১০০বছর টিকে থাকবে মসজিদটি। মোগল আমলে তৈরি পুরাতাত্ত্বিক এ নির্দশনটি দেখতে দেশের পাশাপাশি জার্মানি, ফ্রান্স ও আমেরিকা থেকেও দর্শনার্থী আসছে বলে জানান তিনি।

স্থানীয়রা জানান, এলাকাবাসীর ইচ্ছাকে সম্মান দেখিয়েই চৌধুরী পরিবার মসজিদটিকে সংরক্ষণ করছে। আড়াইশ’ বছর আগের আদলেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মসজিদের রূপ। এ জন্য এলাকার কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয়নি।

 

মর্নিংনিউজ/বিআইএস

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *