মেহেদি হাসান রাজু: প্রতিটি খারাপ বিষয়ের কিছু ভালো দিক রয়েছে। এই ধরুন দেয়ালে ঝুলে থাকা নষ্ট ঘড়ির কথা। কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললেও এটি কিন্তু দিনে ২ বার সঠিক সময় বলে দিতে পারে। আমরা বিশ্ববাসী খুব খারাপ একটা সময় অতিবাহিত করছি ঠিকই, কিন্তু এর মাঝেই আমরা বেশকিছু ভালো বিষয়ও উপলব্ধি করতে পারছি।
পৃথিবীকে নির্মমভাবে শাসন করা মানবজাতি দীর্ঘদিন যাবৎ গৃহবন্ধী। আর এই সুযোগে প্রকৃতি সজীব হয়ে উঠেছে, স্বল্প সময়েই ফিরে পাওয়ার চেষ্টা করছে তার আপন রূপ।
করোনা মহামারির মাঝেই আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় টাইম ফর নেচার অর্থাৎ প্রকৃতির জন্য সময়। আমরা যে প্রকৃতির জীবনরস আস্বাদন করে বেঁচে আছি, সেই প্রকৃতির জীবন বাঁচানোর সময় এখনই।
নির্মমতা নয়, নির্মলতা দিয়ে ভালবাসতে হবে ধরণিকে, তবেই তো ধরণিমাতা উজাড় করে ভালোবাসবেন তাঁর মানবসন্তানকে।
করোনার কারণে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন, এ পর্যন্ত আক্রান্ত ৬৬ লক্ষের অধিক। বিজ্ঞান-প্রযুক্তির কল্যাণে আমরা অনেক কিছু আবিষ্কার করেছি, জয় করেছি চন্দ্র, ছুটেছি মঙ্গলের প্রাণে। কিন্তু…! দীর্ঘ ৭-৮ মাস প্রাণপণ চেষ্টা করেও করোনা মোকাবিলা করতে পারছি না, পারছি না কার্যকরী একটি ভ্যাকসিন তৈরি করতে!
একবারও কি আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে না- এই মহামারি আমাদের কৃতকর্মের ফল, এই মৃত্যুলীলা প্রকৃতির ওপর করা বর্বর অত্যাচারের প্রতিশোধ! হয়তো এমন প্রশ্ন সবার মাঝেই ঘুরপাক খেতে খেতে ঘূর্ণিপাকে হারিয়ে যায়, কিন্তু মননে আঘাত করে না।
প্রতিবছরের মতো এ বছর পরিবেশ দিবস নিয়ে সভা-সেমিনার, আলোচনা, সমালোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। হয়তো প্রকৃতি নিজেই চায় না এমন লোক দেখানো আয়োজন হোক। মন থেকে পৃথিবীকে ভালো না বাসলে পৃথিবী তো এমন নির্দয় আচরণ করবেই।
প্রকৃতি আমাদের জন্য নীরবে এত কিছু করে যাচ্ছে, আমরা কি পারি না তার জন্য কিছুটা সময় ব্যয় করতে? এখনই তো সময় সচেতন হওয়ার, নয়তো করোনার চেয়েও ভয়াবহ দুর্যোগ আসতে পারে ভবিষ্যতে। প্রকৃতি-মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে সজাগ হতে হবে পরিবেশের দূষণ প্রতিরোধে।
আমরা প্রকৃতির কাছে খুবই সামান্য, যার প্রমাণ চোখের সামনেই দৃশ্যমান। এত উন্নত প্রযুক্তি থাকা সত্ত্বেও একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে দম বের হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেখুন, প্রকৃতি ঠিকই পেরেছে তার স্বমহিমায় ফিরে যেতে, পেরেছে নিজের ক্ষতিগুলো কিছুটা হলেও সারিয়ে নিতে, পশু-পাখিদের ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের পছন্দের পরিবেশ। আর তাই তো দূষিত সাগরজল পরিণত হয়েছে স্বচ্ছ নীল জলরাশিতে, ডলফিন সাঁতরে বেড়াচ্ছে আপন মনে, লাল কাঁকড়া ছুটে চলেছে নির্বিঘ্নে।
বিশুদ্ধ বাতাসে বুক ভরে নিচ্ছি শ্বাস,
স্নিগ্ধ সবুজে মুগ্ধ দু-নয়ন, এর মাঝেই হোক ভবিষ্যৎ বসবাস।