কেশবপুরে হাতুড়ে ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে মৃত সন্তান প্রসব! সন্তান হত্যার দায়ে স্ত্রীকে তালাক

কেশবপুরে হাতুড়ে ডাক্তারের ওষুধ খেয়ে রাতে মৃত সন্তান প্রসব করায় সকালে সেই সন্তানকে হত্যার অভিযোগে স্ত্রী রুখছানা বেগমকে তালাক দিয়েছেন স্বামী আজিজুর রহমান। এই ঘটনাটি ঘটেছে কেশবপুর উপজেলার গড়ভাঙ্গা গ্রামে। ২ সন্তানের জননী রুখছানা বেগম (৩০) সাংবাদিকদের জানান, “আমার স্বামী ও গড়ভাংগা বাজারের মুক্তা ফার্মেসীর স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান মনি পরিকল্পিত ভাবে ওষুধের মাধ্যমে আমার সন্তানকে হত্যা করেছে। তারা আমার ওপর দোষ চাপিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে।” এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে ফার্মেসী মালিক মনি (হাতুড়ে ডাক্তার) দোকান বন্ধ করে গাঁ ঢাকা দিয়েছে। গত শুক্রবার ঘটনা স্হলে গিয়ে জানা যায়, কেশবপুর উপজেলার গড়ভাঙ্গা গ্রামের মোবারক গাজীর ছেলে আজিজুর রহমান গাজী গত ১৯শে মার্চ বিকেলে তার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রুকছানা বেগমকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলে গড়ভাঙ্গা বাজারে আসতে বলে। স্বামীর কথামত সে গড়ভাঙ্গা বাজারে আসলে তাকে ওই বাজারের মুক্তা ফার্মেসীতে গিয়ে কথিত মনি ডাক্তারের কাছ্থেকে ওষুধ নিতে বলে। রুখছানা বেগম ওই ফার্মেসীতে গেলে ডাক্তার তাকে ওষুধ দেন। এসময় কথিত মনি ডাক্তার তার কাছ থেকে ওষুধের দাম বাবদ ৩ শত টাকা নেন। ওই ওষুধ নিয়ে সে তার স্বামীর সাথে বাজারে দেখা করে বাড়িতে ফিরে আসে। তার স্বামী আজিজুর রহমানের গড়ভাঙ্গা বাজারে একটি চায়ের দোকান চালায়। প্রতিদিনের মত রাতের খাওয়া- দাওয়া শেষে রুখছানা ওই ওষুধ সেবন করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে। পরবর্তিতে ঘন্টাখানের পর তার প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে তার গর্ভপাত ঘটে। এক সময় তার একটি মৃত ছেলে সন্তান জন্ম নেয়। সদ্য ভূমিষ্ঠ মৃত নবজাতককে ওই রাতেই তাদের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরবর্তিতে মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার জের ধরে শুরু হয় গৃহবধূ রুখছানা বেগমের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। এক পর্যায়ে পরের দিন সকালে রুখসানার পিতা-মাতাকে খবর দিয়ে এনে তাদেরকে আটক করে রাখা হয়। এরপর তারা জোর করে তালাক স্বাক্ষর করে নিয়ে রুখসানাসহ তার পিতা, মাতা ও তার ছোট বাচ্চাসহ তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এমন সময় তার বড় ছেলেকে তার স্বামী ও তার দাদী জোর করে কেড়ে নেয়। এরপর আজিজুর রহমান মণিরামপুর উপজেলার মুজগুন্নি এলাকার কাজী মোস্তফার ছেলেকে ডেকে আনেন। বাড়িতে বিচার বসিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগে মাত্র ৩০০ টাকার জন্য ডাক্তার মণি এক মায়ের সন্তানকে হত্যা করার কারণে একটি সংসার ভেঙ্গেছে এমন অভিযোগে তদন্ত পূর্বক তার শাস্তি দাবী করেন। গৃহবধূ রুখসানা বেগম আরো বলেন, “আমার তৃতীয় সন্তান আমার গর্ভে আসার পর থেকেই আমার স্বামী ওই সন্তান নষ্ট করার জন্য আমাকে নানা ভাবে চাপ দিতে থাকে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায়, আমার স্বামী ও শাশুড়িসহ ওদের বাড়ির লোকজন আমাকে নানা ভাবে নির্যাতন করতো। এরই মধ্যে আমি গত ১৯ মার্চ একটু অসুস্থতা বোধ করি এবং আমার স্বামীকে জানাই।”
রুখছানার পিতা নজরুল ইসলাম বলেন, “আমার মেয়ের মৃত সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার খবর পেয়ে আমার স্ত্রী কোহিনুর বেগমকে জানাই এবং আজিজুরের বাড়িতে পাঠাই। এসময় তারা আমার স্ত্রীকে আটক করে রেখে আমাকে খবর দিলে আমিও সেখানে যাই। গিয়ে দেখি তারা আগে থেকেই কাজী ডেকে এনেছে। ওই সময় তারা জোর করে আমার মেয়েকে দিয়ে তালাক নামায় স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং এই তালাকে আমার ও আমার স্ত্রীকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে। আজিজুর রহমানের মা জোবেদা বেগম বলেন, “আমার বউমা রুখছানা আমাদেরকে না জানিয়ে ডাক্তার মণির কাছ থেকে ওষুধ কিনে খেয়ে সন্তানকে নষ্ট করেছে। এই অপরাধে আমরা তাকে তালাক দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছি। ওই তালাকে তারাও স্বাক্ষর করেছে।”
আজিজুর রহমানের স্বাক্ষাত না পেয়ে মোবাইলের মাধ্যমে একাধিক বার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি। গড়ভাঙ্গা মুক্তা ফার্মেসীর কথিত ডাক্তার মনি বলেন, “আজিজুরের স্ত্রী রুখছানা আমার দোকানে ওষুধ নিতে এসেছিলো। কিন্তু আমি তার কাছে কোন ওষুধ বিক্রি করিনি।”

 

মর্নিংনিউজ/বিআই/শেআ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *