পাষণ্ড ছেলের পিটুনিতে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন পিতা-মাতা

ছেলের হাতে নির্যাতনের শিকার বজল আহমেদ ও আলম শাইর

বউত দুক্ক হস্টে পোয়াওয়েরে বড় গইল্লাম। নিজে না হায় তারে হাবাইলাম, হনদিন হস্ট পাইত ন’দি। আজিয়া এ পোয়া আই ও আআর বউয়েরে পিডিয়েরে হাসপাতালের বেডত লেডাই লাইক্কে! এই দুক্ক আআই হারে হইয়ুম। আল্লাইয়ে গরিবো অনে বিচার।’ কথাগুলো কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলাধীন টইটং ইউনিয়নের ৮৯ বছর বয়সী কৃষক বজল আহমেদের। স্থানীয় ভাষায় বলা কথাগুলোর অর্থ দাঁড়ায়- অনেক দুঃখে-কষ্টে আমার ছেলেটাকে বড় করলাম। নিজে না খেয়ে তাকে খাইয়েছি, কোন কষ্ট পেতে দেয়নি। আজ সেই ছেলে আমাকে আর আমার স্ত্রীকে পিটিয়ে হাসপাতালের বেডে শুইয়ে রাখছে। এ দুঃখ আমি কাকে বলব। আল্লাহ করবে এই বিচার।

বৃদ্ধ কৃষক বজল আহমেদের সাত ছেলে-মেয়ে। তৎমধ্যে সবার ছোট ছেলে হলো আবদুল হামিদ। এই আবদুল হামিদের পিটুনিতেই হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন পিতা বজল আহমেদ ও মা আলম শাইর (৭৫)।

গত ২৩ জুন (মঙ্গলবার) দুপুরে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের বজল আহমেদের বাড়িতে ঘটা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ভুক্তভোগী বজল আহমদের মেয়ের স্বামী মো. কালু বলেন, ‘খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শ্বশুর বজল আহমদ ও শাশুড়ি  আলম শাইরকে উদ্ধার করি। পরে তাদের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে চিকিৎসার জন্য পেকুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করাই।’

কর্তব্যরত চিকিৎসকরা আহত দুই জনের মধ্যে বজল আহমদের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন বলে জানায় মো. কালু।

ভুক্তভোগী বজল আহমদ বলেন, ‘পরিবারের ছেলে-মেয়ে সাতজনের মধ্যে আবদুল হামিদ সবার ছোট। দীর্ঘ এক যুগ ধরে সে আমার বসতভিটা ও ফসলি জমি একা ভোগ দখল করার লক্ষ্যে আমার পরিবারের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। পর্যায়ক্রমে আমি, আমার স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ সকলেই তার নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছি।’

১১ বছর আগে আবদুল হামিদ তার বড় ভাই আবদু রশিদকে কুপিয়ে পঙ্গু করে দিয়েছে বলেও জানায় নিজ সন্তানের হাতে নির্যাতিত এই ৮৯ বছর বয়সী বৃদ্ধ।

আরও পড়ুন: নাঙ্গলকোটে গণধর্ষণের পর যুবতীকে হত্যা

প্রতিবেশীরা জানান, ঘটনার দিন আব্দুল হামিদ বসতভিটা ও বাড়িঘর দখল করতে আসলে তার পিতা বজল আহমদ বাধা দেয়। ফলশ্রুতিতে হামিদ ক্ষিপ্ত হয়ে তার মা-বাবাকে নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়ে জখম করে।

এ বিষয়ে পেকুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল আজম প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, ‘এই ঘটনা সম্পর্কে আমরা অবগত নয়। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে এই ঘটনার পর এতদিন চুপ থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আরেক ভুক্তভোগী মা আলম শাইর বলেন, এ বিষয়ে কাউকে জানালে আবদুল হামিদ আমাদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তাই কাউকে জানানোর সাহস পায়নি।

আবদুল হামিদের এমন নির্যাতন থেকে বাঁচতে আইনের সাহায্য চেয়েছেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *