প্রবাসী আয়ে বড় আঘাত আসছে?

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অর্থনীতি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির অবস্থা একই। এত কিছুর মধ্যেও আশা জাগাচ্ছে প্রবাসী আয়। কিন্তু রিয়াদভিত্তিক জাদওয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির একটি রিপোর্টে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য। তারা বলছে, চলতি বছরেই ১২ লাখ বিদেশি শ্রমিক ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব। বিশ্লেষকদের মতে, এমন তথ্য বাংলাদেশের জন্য আরও একটি দুঃসংবাদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে অবস্থান করছেন। রেমিটেন্স প্রবাহের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রেমিটেন্স আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। এর মধ্যে আবার সিংহভাগই আসে সৌদি আরব থেকে। যেমন- গত মে মাসেও প্রবাসী আয় আহরণের শীর্ষ ১৫টি উৎস দেশ হলো সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, ওমান, কাতার, ইতালি, বাহরাইন, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান। সবগুলো দেশেই এখন চলছে লকডাউন। এই অবস্থায় অতিরিক্ত খরচ কমানোর চিন্তা করছে দেশগুলো।

কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যপতন ঘটেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট লাঘবে বেশকিছু উচ্চাভিলাষী প্রকল্প স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সৌদি আরব। এর ধারাবাহিকতায় বিপুল-সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিককে পর্যায়ক্রমে ফেরত পাঠাবে দেশটি, চলতি বছরের শেষ নাগাদ যার সংখ্যা দাঁড়াবে ১২ লাখ। আর ফেরত পাঠানোর ঝুঁকিতে থাকা শ্রমিকদের বড় একটি অংশই প্রবাসী বাংলাদেশি।

রিয়াদভিত্তিক জাদওয়া ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানির এক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, মূলত সৌদি নাগরিকদের জন্য চাকরির বাজার বড় করতে দেশটির সরকারের আগে থেকে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং সাম্প্রতিক সময়ে চলমান করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে বিপুল-সংখ্যক বিদেশি শ্রমিককে ফেরত পাঠাবে সৌদি আরব।

জাদওয়ার এই প্রক্ষেপণের ওপর ভিত্তি করে গত সোমবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সৌদি গেজেট। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবের কিছু কিছু সেক্টর অদূর ভবিষ্যতে পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফিরে আসবে এমন আশা নেই। লকডাউন ব্যবস্থা ধীরে ধীরে শিথিল করার পরও ভ্রমণ, হোটেল, রেস্তোরাঁ, পর্যটন ও বিনোদনের সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো পূর্ণ কার্যক্রমে আসার সম্ভাবনা নেই। এ অবস্থায় সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত যেসব খাত থেকে সবচেয়ে বেশি হারে বিদেশি শ্রমিকদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে আতিথেয়তা, খাদ্য পরিষেবা, প্রশাসনিক ও সহায়তা কার্যক্রম, ট্রাভেল এজেন্সি, সুরক্ষা ও নির্মাণ খাত। তবে ১২ লাখ বিদেশি শ্রমিক চলে যাওয়ার পরও ২০২০ সালের শেষ নাগাদ সৌদিদের মধ্যে বেকারত্বের হার ১২ শতাংশেই অপরিবর্তিত থাকবে।

এদিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং চলমান অর্থনৈতিক ক্ষতির কারণে আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ১০ লাখ বাংলাদেশি অভিবাসীকে দেশে ফিরে আসতে হতে পারে। দূতাবাসের আশঙ্কা, ২০৩০ সালের মধ্যে নিজ দেশের নাগরিকদের মাধ্যমে ৭০ শতাংশ বিদেশি কর্মী প্রতিস্থাপনের নীতিও এর আরেকটি কারণ হতে পারে। শ্রমিক ফেরত আসার আশঙ্কার বিষয়টি উল্লেখ করে গত মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছে দূতাবাস।

গত সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, দেশে ফিরতে আগ্রহী প্রবাসী শ্রমিকদের ফেরত আনার ব্যাপারে মতৈক্যে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী-পর্যায়ের ফোনালাপে বাংলাদেশ সৌদি আরব থেকে শ্রমিক ফিরিয়ে আনতে সম্মতি দিয়েছে। আর বাংলাদেশের অনুরোধে পর্যায়ক্রমে এ শ্রমিকদের ফেরত পাঠাতে সম্মত হয়েছে সৌদি আরব।

অর্থসূচক
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *