রংপুরে সাংবাদিককে হয়রানি, পিপিকে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন


রংপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় বাধা প্রদান, আসামির ছবি তুললে গ্রেফতার করার হুমকিসহ দুই সাংবাদিককে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালত-১ এর বিশেষ পিপি রফিক হাসনাইনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণসহ শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। রবিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে স্থানীয় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিকস এবং অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন। সমাবেশে পিপি হাসনাইনকে পদ থেকে অপসারণে সাত দিনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তার সব খবর বয়কটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।রংপুর ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি আবুল কাশেমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক একাত্তর টিভির সাংবাদিক শাহ বায়েজিদ আহাম্মেদ, সিটি প্রেসক্লাবের কোষাধাক্ষ জীবন, একুশে টিভির সাংবাদিক লিয়াকত আলী বাদল, নিউজ ২৪ টিভির রেজাউল করিম মানিক, চ্যানেল ২৪ এর সাংবাদিক ফকরুল শাহিন যমুনা টিভির মাযহারুল মান্নান, এশিয়া টিভির বায়েজিদ ওসমানী, দীপ্ত টিভির বালুর রহমান, ভিডিও জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সুমন, ফটো সাংবাদিক মুকুলসহ অন্যান্য সাংবাদিক নেতারা। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন আদালত-১ এর বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার রফিক হাসনাইন নিজেই সাংবাদিকদের ফোন করে ওই আদালতে দুই কিশোরী ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণা হবে জানিয়ে খবরটি সংগ্রহ করতে আসার আহ্বান জানান। খবর পেয়ে রংপুরে কর্মরত টেলিভিশনের রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসন, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা ওই আদালতে যান। ওইদিন মামলাটিতে এক আসামির ফাঁসি ও এক আসামির সাত বছর কারাদন্ডের আদেশ দেন বিচারক। রায় ঘোষণার সময় সরকারপক্ষের আইনজীবী রফিক হাসনাইন আদালতে উপস্থিত না থাকায় তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য খোঁজ করে জানতে পারেন, তিনি রংপুর মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ৬ তলায় কোতোয়ালি আমলি আদালতে ঢাকা মেট্রোপলিটান পুলিশে (ডিএমপি) কর্মরত তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হত্যা প্রচেষ্টা মামলায় আসামিপক্ষে জামিন শুনানি করতে গেছেন। এ খবর পেয়ে টেলিভিশন ও পত্রিকার সাংবাদিকরা তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য সেখানে গেলে পিপি রফিক হাসনাইন আদালত থেকে বের হয়ে বলতে থাকেন, আসামিদের কোনও ছবি নেওয়া যাবে না। ছবি নিলে গ্রেফতার করা হবে বলে হুমকিও দেন তিনি। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি টেলিভিশনে কর্মরত দুই ক্যামেরাপাসনকে আটক করে আদালতের ভেতরে নিয়ে যান। সাংবাদিকরা কোনও ছবি নিতে আসেননি, তার বক্তব্য নিতে এসেছে— এমনটা জানালেও তিনি শাসাতে থাকেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের চলে যেতে বাধ্য করেন। পরে সিনিয়র সাংবাদিকরা এসে আটক দুই সাংবাদিককে ছাড়িয়ে আনেন। এ ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে সাংবাদিকরা পিপি রফিক হাসনাইনের চেম্বারে গেলে তিনি সেখানে আবারও তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। ঘটনাটি রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতিতে অবহিত করে রবিবার বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে সাংবাদিকরা। সমাবেশ থেকে সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়ে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে পিপি রফিক হাসনাইনকে পিপি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। সেই সাথে পিপি হাসনাইনকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বয়কট করার ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে সাংবাদিকরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল মালেক অ্যাডভোকেট ও জেলা প্রশাসকের কাছে পৃথক স্মারকলিপি প্রদান করে।

 

মর্নিংনিউজ/আই/শাশি

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *