একটুর জন্য রক্ষা পেলো গিলের ডাবল হান্ড্রেড!

কেরিয়ারের প্রথম ডাবল হান্ড্রেড করলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ খেলোয়াড় শুভমন গিল। তাঁর ১৪৯বলে ২০৮রানের উপর ভর করে ৩৪৯রানের পাহাড় গড়ল ভারত। নিউজ়িল্যান্ডের হয়ে ব্রেসওয়েল শতরান করলেও তিনি দুঃখজনক ভাবে শেষ পর্যন্ত আর দলকে জেতাতে পারলেন না। আর নিউজিল্যান্ড হেরে যায় ১২রানে। খেলা দেখে একটা সময় দেখে মনে হচ্ছিল, শুভমনের করা রানও তারা করতে পারবে না। মাত্র ১৩১রানে ৬উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং ধুঁকছিল কিউইরা। কিন্তু সেখান থেকে দলকে টেনে তুললেন দুই মাইকেল-ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনার। দুরন্ত এক শতরান করলেন ব্রেসওয়েল। দু’জন করলেন ১৬২রানের জুটি। এই দুই কিউই জুটির দৌলতে টিকে থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিততে পারলেন না। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হল ব্রেসওয়েলের ৭৮বলে ১৪০রানের অনবদ্য লড়াই। নিজেদের ঘরের মাঠে বল হাতে জ্বলে উঠলেন মুহম্মদ সিরাজ। ভয়ঙ্কর এই কিউই জুটি ভাঙলেন তিনিই। শেষ পর্যন্ত হায়দ্রাবাদে ১২রানে নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে এই সিরিজের শুভ মহরৎ ঘটালো রোহিত শর্মার দল। ম্যাচ জিতলেও বেশ কয়েকটি প্রশ্ন থেকে যায় খেলা শেষে। শুভমন ছাড়া বাকি ব্যাটাসম্যনরা কেউই তাদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। এখানে আরও এক বার ব্যর্থ বলা যায় ভারতীয় শিবিরের অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। প্রতি ম্যাচেই কোনও এক জন দ্বিশতরান করবেন না। রোহিতকে চিন্তায় রাখবে এই দলের বোলিং আক্রমণ। শামি, সিরাজ ও যাদব ছাড়া বাকিরা তাদের ছোবল দিতে ব্যর্থ। একটা সময় তো মনেই হয়েছিল ভারত হেরে যাবে। সহজ ম্যাচকে আরো কঠিন করে তুললেন ভারতীয় এই বোলাররা। কিউইদের সাথে কোনও রকমে প্রথম ম্যাচ জিতলেও বোলিং নিয়ে এখনও অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাদেরকে। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রোহিত শর্মার ভারত। পরের সময়ে শিশির পড়বে জেনেও নিজেদের পরীক্ষার মুখে ফেলেছিলেন তিনি। আর সেই পরীক্ষায় বাকিরা কেউ পাশ করতে না পারলেও শুভমন পেলেন লেটার মার্কস্। ওপেনিংয়ে রোহিত ও গিল শুরুটা ভালই করেছিলেন। দু’জনে মিলে দ্রুত রান তুলছিলেন কিন্তু রানের গতি আরো বাড়াতে গিয়ে ৩৪রানের মাথায় ব্যাক টু প্যাভিলিয়ন রোহিত। রান পাননি বিরাট কোহলি ও ঈশান কিশানও। আজকের দিনটা ছিল শুভমনের। অনবরত উইকেট পড়লেও পরের কয়েকটি বলে বড় বড় শট খেলে রানের গতি বাড়িয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। ফলে উইকেট পড়লেও বেশ বড় রানের দিকে এগোচ্ছিল ভারত। শুভমনকে সঙ্গ দেন সূর্য ও পান্ডে। অবশেষে সূর্য৩১(২৬) আর হার্দিক২৮(৩৮) রান করেন। আম্পায়ারের ভুলের বলি হন হার্দিক পান্ডে । রিপ্লেতে স্পষ্ট দেখা যায় যে বল উইকেটেই লাগেনি। উল্টে কিউই উইকেটরক্ষক ল্যাথামের গ্লাভসে লেগে বেল পড়ে যায়। কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার আউটের সিদ্ধান্ত দিয়ে দেন এবং বিরক্ত হয়ে মাঠ ছাড়েন হার্দিক। মাত্র উনিশ ম্যাচে খেলে শুভমন তার নিজের তৃতীয় শতরান করেন। সেঞ্চুরি করেও কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি। অন্যদিকে উইকেট পড়তে থাকায় দ্রুত রানের গতি বাড়ান তিনি। সার্ধশত রান পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে একটা সময় মনে হচ্ছিল তিনি আর দ্বিশত রানের দিকে আগাতে পারবেন না। কারণ, ইতোমধ্য কয়েকটি ওভারে তাদের রানের গতি একদমই কমে গিয়েছিল। কিন্তু ৪৯ তম ওভারকে টার্গেট করে তিনি ফার্গুসনকে পরপর তিন বলে তিনটি ছয় মেরে ২০০রানের বিশাল এক ইতিহাস সৃষ্টি করেন। শেষ ওভারের প্রথম বলে আবারও ছক্কা মারেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় বলে শট মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান। অবশেষ ৩৪৯রানে শেষ হল ভারতের ইনিংস। রান তাড়া করতে নেমে শুরুটা একদমই ভাল হয়নি নিউজ়িল্যান্ডের। চরমভাবে ব্যর্থ দলের টপ ও মিডল অর্ডার। ফিন অ্যালেন ৪০রান করলেও প্রথম ছয় ব্যাটারের কেউই রান পেলেন না। নতুন বলে শামি-সিরাজ ও মাঝের ওভার গুলোতে কুলদীপের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মাত্র ১৩১রানে ৬উইকেট পড়ে যায় তাদের। সেখান থেকে এবার জুটি বাঁধলেন ব্রেসওয়েল ও স্যান্টনার। পাল্টা আক্রমণ শুরু করলেন দলের বাকি বোলারদেরকে নিশানা করে। প্রতি ওভারে বড় শট খেলা শুরু করেন অদম্য এই কিউই জুটি। তবে বেশি আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করেন ব্রেসওয়েল এবং একের পর এক বল আছড়ে ফেলছিলেন বাউন্ডারির বাইরে। অবশেষে অনেক চাপে পড়ে যায় ভারতীয় বোলিং। বাকি বোলাররাও করতে থাকেন অনেক বাজে বল বিশেষ করে শার্দুল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দর। দুরন্ত এক শতরান করেন ব্রেসওয়েল। ১২চার ও ১০ছক্কায় করেন ৭৮বলে ১৪০রানের বিশাল এক ইনিংস। ৪৫বলে ৫৭রান করেন স্যান্টনার। একটা সময় মনে হচ্ছিল, নিউজ়িল্যান্ডকে বন্দরে পৌঁছে দেবেন এই দুই জন। কিন্তু তখনই ভারতকে আবার খেলায় ফেরান পেসার সিরাজ এবং কফিনে শেষ পেরেক ঠোকান তিনি। বোলিং করতে এসে ৫৭রানের মাথায় স্যান্টনারকে আউট করে দেন তিনি। অবশেষে তিনি ১০ওভারের ২টা মেডেনসহ ৪৬রান দিয়ে নেন ৪উইকেট। স্যান্টনার আউট হলেও প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন মাইকেল ব্রেসওয়েল। সব দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি তাঁর কাঁধে। প্রায় প্রতি বলে বড় শট খেলার চেষ্টা করছিলেন এবং সফলও হচ্ছিলেন। শেষ ওভারে জিততে দরকার ছিল আর ২০রান। শার্দুলকে প্রথম বলে মারেন বিশাল এক ছক্কা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দ্বিতীয় বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান। ব্রেসওয়েল আউট হতেই মাঠে নেমে আসে মৃদ নীরবতা এবং সাথে সাথে শেষ হয়ে যায় ৩৫০রানের হিমালয়সম পাহাড়ে চড়ার মহাযাত্রা! ভারতীয় শিবিরে স্বস্তি নেমে আসে গিলের ২০০রানের ইনিংসে এবং দলের ১২রানের জয়।

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *