কুড়িগ্রামের দুই চরের ২শ পরিবারের ভাগ্যেও জোটেনি এক টুকরো কোরবানির মাংস

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চল উত্তর আলগা ও খেওয়ার চর এলাকার ২শ পরিবারের একজনেরও ভাগ্যে জোটেনি এক টুকরো কোরবানির মাংস। শনিবার (১ আগষ্ট) ঈদুল আযহার দিনে মানুষজন কোরবানির মাংস খাওয়ার উৎসবে মেতে থাকলেও এসব পরিবারের মানুষের মুখে উঠেনি মাংসের স্বাদ। সামর্থ্যবানদের দিকে সারাটা দিন তাকিয়ে থেকে চোখে মুখে কষ্টের ছাপ নিয়ে অবশেষে রাত পার করেছেন এসব পরিবার।

রবিবার (২ আগষ্ট) দুপুরে রৌমারী উপজেলার যাদুর চর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য মো: হায়দার আলী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, উত্তর আলগা ও খেওয়ার চর এই দুটি এলাকা নিয়ে ৯নং ওয়ার্ড গঠিত। এই এলাকা দুটি প্রত্যন্ত চরাঞ্চল। এখানকার অধিকাংশ মানুষই দরিদ্র ও দিনমজুর। এছাড়া অতিসামান্য কিছু মানুষ আছেন যারা ভিন্ন শ্রেণী পেশার। উত্তর আলগা ও খেওয়ার চরের প্রায় ২শ পরিবারের একজনকেও কেউ এক টুকরো কোরবানির মাংস দিয়ে সহযোগিতা করেননি। এখানকার এক সমাজের মানুষ অন্য সমাজের মানুষকে কোরবানির মাংস দেন না। অনেক সমাজেই প্রায় ২০-৩০ জন মানুষ মিলে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কালেকশন করে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গরু কোরবানি দেন। তাতে যে মাংস ভাগে পান তা অন্যকে দেয়া সম্ভব হয় না।

তিনি আরও জানান, আমার জানা মতে, খেওয়ার  চরের বিধবা- ছকিনা, মাজেদা সহ শাহালম ও উত্তর আলগা এলাকার বিধবা- হালিমা ও নবিরন সহ নাম না জানা অসংখ্য মানুষসহ প্রায় ২ শতাধিক পরিবারকে কেউ কোরবানির মাংস না দেওয়ায় তাদের হাড়িতে  ইদের দিন মাংস রান্না হয়নি। এবং তারা কোন প্রকার মাংস খাননি।

উত্তর আলগা গ্রামের জহুরা জানান, আমি একজন বিধবা মহিলা ও অত্যন্ত দরিদ্র মানুষ। গতকাল ঈদের দিন ও আজ এখন পর্যন্ত কেউ আমাকে এক টুকরো কোরবানির মাংস দেয়নি। আমি গতকাল ইদের দিনে কদুর তরকারী দিয়ে  ভাত খেয়ে সারা দিন সামর্থ্যবানদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যদি কেউ এক টুকরো কোরবানির মাংস দিতো তাহলে তা রান্না করে খেতাম। কিন্তু দিন শেষে তা ভাগ্যে জোটেনি। ইদের দিনেও মাংস খাওয়ার সাধ পূর্ন হয় নি। আমাদের এলাকার এক সমাজের মানুষ কোরবানি দিলে তা অন্য সমাজের মানুষকে দেন না।

যাদুর চর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ সরবেশ আলী জানান, আমার পুরো ইউনিয়ন বন্যায় পানিবন্দি ছিল। করোনা ও বন্যায় কর্মহীন হয়ে পড়া এসব মানুষজন অর্থ ও খাদ্য সংকটে রয়েছেন। বিশেষ করে ৯নং ওয়ার্ডের খেওয়ার চর এলাকার মানুষের মাঝে নেই ইদের আনন্দ। এখানকার অনেক পরিবারের মুখেই এই ইদে এক টুকরো কোরবানির মাংস পড়েনি। তারা খুবই কষ্টে আছেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *