হ্যালো এটা কি-৯৯৯? করোনা পরিস্থিতিতে জাতীয় জরুরি সেবার কল সেন্টার ‘৯৯৯’ নম্বরে এভাবে হাজারো মানুষ প্রতিনিয়ত ফোন করছেন। কেউ জানাচ্ছেন ত্রাণে দুর্নীতি আর অনিয়মের অভিযোগ। অনেকে ত্রাণের সহায়তা চাইছেন। শত শত মানুষ চাচ্ছেন কোন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। কেউ অ্যাম্বুলেন্সের সহায়তা চাচ্ছেন। প্রবাসী কেউ তথ্য গোপন করে ঘোরাফেরা করলে সেটাও ৯৯৯ নম্বরে জানানো হচ্ছে। এ ছাড়া লকডাউন অমান্য করলে পুলিশ পাঠানোর সহায়তা চেয়েও জরুরি কল সেন্টারে ফোন যাচ্ছে।
১৮ মার্চ থেকে ৭ মে পর্যন্ত এক মাস ১৯ দিনে ৯৯৯-এ করোনা সম্পর্কিত কল গেছে দুই লাখ ৮০ হাজার ৫৩২টি। আর ২১ এপ্রিল থেকে ৭ মে পর্যন্ত ত্রাণে দুর্নীতি আর অনিয়ম সংক্রান্ত কল ছিল ১৬৪টি। সংশ্নিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানান।
পুলিশের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা জানান, ১৮ মার্চ থেকে ৭ মে পর্যন্ত ৯৯৯-এ মোট কল ১৮ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৫টি। এর মধ্যে করোনা সম্পর্কিত কল দুই লাখ ৮০ হাজার ৫৩২। এত সংখ্যক লোকের মধ্যে দুই লাখ ৬৪ হাজার ৭২ জন করোনা সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চেয়েছেন। এই সময়ে কল ফর সার্ভিস (সিএফএস) ১৬ হাজার ৪৬০টি। করোনা পরিস্থিতিতে সব ধরনের সেবা মিলিয়ে ৯৯৯-কল ফর সার্ভিস (সিএফএস) ছিল ৪৭ হাজার ১২টি। সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কল করে নানারকম তথ্য দেওয়া হয়। একটা কলে জানানো হলো যে ১০ টাকার সরকারি চাল বাইরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি কার্ডের চাল পরিমানে কম দেওয়া হচ্ছে। সরকারি ত্রাণ কেউ পাচার করছে। কলারের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পরপরই তা সংশ্নিষ্ট এলাকার এসপি, সার্কেল এএসপি এবং ওসিকে জানানো হয়। তারা দ্রুত সেখানে ফোর্স পাঠিয়ে অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। ত্রাণে অনিয়মের ক্ষেত্রে যেসব কল পাওয়া গেছে তার কিছু সত্যতা মিলেছে। আবার কিছু ঘটনায় দেখা গেছে কেউ বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণের জন্য চাল-ডালসহ বিভিন্ন সামগ্রী কোনো একটি জায়গায় মজুদ রেখেছেন। কিন্তু তথ্যদাতা মনে করল ওই সামগ্রী হয়তো সরকারি জিনিস। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর কলারকে প্রকৃত ঘটনা জানিয়ে দেওয়া হয়। গাজীপুর থেকে সম্প্র্রতি একটি কল আসে। জানানো হয়, তার এক চাচি করোনা উপসর্গ নিয়ে আছেন। এরপর তাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়। এ ধরনের কল অসংখ্য আসছে।
অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে শত শত কল আসে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে ঢাকার বাইরে থেকে যারা অ্যাম্বুলেন্স সেবা চাচ্ছেন তাদের সেবা দিতে বেগ পেতে হয়। কারণ অধিকাংশ ঘটনায় দেখা গেছে ঢাকার বাইরে কোনো অ্যাম্বুলেন্সচালক রোগীর করোনা উপসর্গ আছে শুনলেই যেতে রাজি হন না। ঢাকায় অসংখ্য অ্যাম্বুলেন্স থাকায় ৯৯৯ থেকে ফোন গেলে কাউকে না কাউকে পাওয়া যাচ্ছে।
অন্য এক কর্মকর্তা জানান, ত্রাণ চেয়ে কল পাওয়া অনেকে পরিচয় গোপন রাখেন। তার জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করতে সংশ্নিষ্ট এলাকার এসপি এবং ওসিকে জানানো হয়। বেশ কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, করোনা রোগীর তথ্য সংগ্রহ ও জরুরি সেবার নামে কিছু দুস্কৃতকারী সাধারণ মানুষের বাড়িতে গিয়ে অপরাধ সংঘটিত করছে। কোনো অবস্থাতেই আগন্তুকের পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে গৃহে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। সন্দেহ হলে নিকটস্থ থানা অথবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে আগন্তুকদের পরিচয় জানাতে হবে।