করোনার কারণে এক বছর পেছালো নতুন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই প্রবর্তনের কাজ

করোনাভাইরাসের দাপটে পিছিয়ে গেল নতুন কারিকুলাম প্রবর্তনের কাজ। আগামী বছর প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরিমার্জিত কারিকুলামে নতুন পাঠ্যবই দেওয়ার কথা থাকলেও করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবে বিশেষজ্ঞরা এ নিয়ে কাজ শেষ করতে পারেননি। প্রস্তুতি শেষ করতে পারেনি জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডও (এনসিটিবি)। ফলে আগামী বছরের পরিবর্তে ২০২২ সালে নতুন কারিকুলামে পাঠ্যবই দেওয়া হবে শিশুদের হাতে। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন কারিকুলাম ও পাঠ্যবই প্রবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা বহাল আছে। নতুন বইয়েই ২০২৪ সালে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটে (আমাই) অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আকরাম-আল-হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়, এনসিটিবিসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে কাজ আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। কারিকুলাম ও পাঠ্যবই প্রবর্তনের মতো কাজে তাড়াহুড়ো করা যায় না। আবার কোনোভাবে শেষ করে চালু করার মতো বিষয়ও নয়। তাই আমরা সময় দিচ্ছি। তবে ২০২৩ সালের মধ্যে কারিকুলাম প্রবর্তনের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক থাকবে।

জানা গেছে, কারিকুলাম নিয়ে বিভিন্ন বৈঠক গুগল-জুমে শেষ করা হয়েছে। কিন্তু অন্তত ৬টি কর্মশালা দরকার, যা উন্মুক্ত পরিসরে করা যায়নি। এটা করতে গেলে বই লেখা বিলম্ব হবে। ফলে নির্ধারিত সময়ে বই ছাপানো আর শেষ হবে না।

সর্বশেষ ২০১২ সালে নতুন শিক্ষাক্রম এবং পরের বছর নতুন পাঠ্যবই প্রবর্তন করা হয়েছিল। নতুন উদ্যোগে আগামী বছরের মধ্যে শিক্ষাক্রম পরিমার্জন শেষ করা হবে। এর আলোকে প্রণীত নতুন বই শিক্ষার্থীদের হাতে যাবে ২০২২ সালে। তবে একসঙ্গে সব শ্রেণিতে নতুন বই প্রবর্তন করা হবে না। ২০২২ সালে কেবল প্রথম, দ্বিতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এ বই পাবে। এর আগে ২০২১ সালে এটি চালুর কথা ছিল। সেইসঙ্গে ২০২২ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, সপ্তম, নবম ও একাদশ শ্রেণিতে নতুন বই প্রবর্তন করার কথা ছিল। প্রথমটি পূরণ করা না গেলেও এই লক্ষ্যটি ঠিক থাকবে।

অর্থাৎ এখন ২০২২ সালে ৮টি শ্রেণিতে আসবে নতুন বই। সেই হিসাবে ২০২৪ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা হবে নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে লেখা বইয়ে। আর পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে হবে ২০২৩ সালে। অর্থাৎ ওই বছরের শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রমে লেখা পাঠ্যবই হাতে পাবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিশ্বে প্রতি ৫-৬ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পর্যালোচনা ও পরিমার্জনের রেওয়াজ আছে। তারই অংশ হিসেবে সরকার তা পরিমার্জনের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আলোকে বইও পরিমার্জন করা হবে।

তিনি বলেন, নতুন কারিকুলাম হবে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত অভিন্ন ধাঁচের। যুগোপযোগী এই কারিকুলামে বিশ্বমানের শিক্ষার্থীর পাশাপাশি ভালো মানুষ করে গড়ে তোলার উপাদান থাকবে। শিক্ষার্থীরা যাতে ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে, সেজন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, করোনাভাইরাসের সময়কালের শিক্ষাও আমরা কারিকুলামে অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ পেয়েছি। অনলাইন-অফলাইন উভয় ধরনের ক্লাসের নির্দেশনা থাকবে। শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করার ডিভাইস দেয়া হবে। কর্মমুখী শিক্ষার জন্য থাকবে টুলবক্স। এত দিন কেবল প্রাথমিক স্তরে দক্ষতাভিত্তিক কারিকুলাম ছিল। এখন দশম শ্রেণি পর্যন্তই কারিকুলাম হবে দক্ষতাভিত্তিক। প্রাথমিকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত ধারাবাহিক মূল্যায়নের অ্যাপ তৈরির কাজ চলছে। শিক্ষকদের জন্য অ্যাপ তৈরির প্রস্তাব আছে। তাতে কারিকুলাম, বই ও টিজি (শিক্ষক গাইড) থাকবে। সর্বোপরি, যুগের চাহিদা, পরিবর্তন ও তথ্যপ্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গতি স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, শিক্ষাক্রম পরিমার্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চারটি নীতি ও কৌশলকে ভিত্তি ধরা হবে। এগুলো হচ্ছে, ২০১০ সালের জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০৩০ সালের মধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), রূপকল্প-২০৪১ এবং আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার। বর্তমানে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ২৪টি পাঠ্যবই পড়ানো হয়। ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১৩টি বই, নবম-দশম শ্রেণিতে ২৭টি বই ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ৩৯টি পাঠ্যবই আছে। অবশ্য বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় ভাগ হওয়ায় নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে সব শিক্ষার্থীকে সব বিষয়ের বই পড়তে হয় না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *