করোনা: হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটেও স্বামীকে বাচাঁতে পারলো না খোকসার রিনা

করোনা উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ স্বামী নুর আল আহাদকে নিয়ে পাগলের মত রাজধানী ঢাকার এক হাসপাতাল থেকে আরেক
হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন স্ত্রী রিনা ইসলাম। কিন্তু করোনা উপসর্গ দেখে সব হাসপাতালই তাকে ভর্তি না নিয়ে ফেরৎ
পাঠিয়েছে। এভাবে প্রায় তিন থেকে চার ঘন্টা এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটে বেড়িয়েছেন তারা। কিন্তু
সব প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হয়। অবশেষে নিজের চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে স্বামীকে মৃত্যুর
কোলে ঢলে পড়তে দেখেন তিনি।

কুষ্টিয়ার খোকসার একতারপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামের শহীদুল ইসলাম বিশ্বাস ও নুর নাহার দম্পতির একমাত্র পুত্র সন্তান নুর
আল আহাদ (৩২)। সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন আহাদের বাবা-মা। প্রিয়তম স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাগলপ্রায়
স্ত্রী রিনা ইসলাম।

শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে এ্যাম্বুলেন্স করে ঢাকা থেকে খোকসার একতারপুরের গ্রামের বাড়িতে আহাদের লাশ পৌছায়।
শেষ পর্যন্ত তড়িঘড়ি করে উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের কোন কর্মকর্তা ছাড়াই দুজন পুলিশ সদস্য এবং পরিবারের
কয়েক জন সদস্যের উপস্থিতিতে বহরামপুর কবরস্থানে আহাদের লাশ দাফন করা হয়।

মৃতের ফুফাতো ভাই পলাশ জানান, করোনা প্রার্দুভাবের শুরু দিকে আহাদ ঢাকার মতিঝিলে একটি এ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাষ্ট্রিতে
হিসাব রক্ষক পদে চাকুরি নেন। স্ত্রী এবং তিন বছর বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে বসবাস করেন তিনি। গত
শনিবার হঠাৎ করে তার জ্বর আসে। বুধবার বিকাল থেকে কাশি শুরু হয়। আহাদ নিজেই মুঠোফোনে ঢাকা মেডিকেলের
একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় থেকে চিকিৎসা চালিয়ে আসছিলেন।

পলাশ জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আহাদের প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, এই রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে। কিন্তু সেখানে
আইসিইউতে সিট খালি নেই। যেখানে আইসিইউ সাপোর্ট রয়েছে এমন কোন হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

অসুস্থ্য আহাদকে এ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ভর্তির জন্য ছুটতে থাকেন স্ত্রী রিনা ইসলাম।
কিন্তু করোনা উপসর্গ জেনে ঢাকার কোন হাসপাতালই তাকে ভর্তি নেয়নি। এভাবে দীর্ঘ প্রায় তিন চার ঘন্টা যন্ত্রনায় ছটফট
করতে থাকে সে। এক পর্যাযে পুনরায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়ার উদ্যোগ নেয় স্ত্রী। কিন্ত রাত দেড়টার দিকে
পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন নুর আল আহাদ। মৃত্যুর পর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর সোয়াব টেষ্টের জন্য
নমুনা সংগ্রহ করে।

পলাশ ক্ষোভের সাথে জানান, তার ভাইকে যদি হাসপাতালে ভর্তি করা যেতো তাহলে হয়তো তাকে বাঁচানো সম্ভব হতো। কিন্তু
করোনা উপসর্গ দেখে তাকে কোন হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। অসহায়ের মত চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় যন্ত্রনায় ছটফট
করতে করতে ভাইকে মরতে দেখেছেন।

পলাশ আরো জানান, ঢাকাতে থাকা অবস্থায় গত বছর আহাদ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তার পর থেকে তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন।
এবার জ্বর আশায় তারা ভেবেছিলেন স্বাভাবিক সিজেনাল ফ্লু। তাই এ্যান্টিবায়েটিক দিয়ে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। মৃত আহাদ এবং
রিনা ইসলাম দম্পতির তিন বছর বয়সী একমাত্র সন্তান মুইজ আল আহাদও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আহাদের রিপোর্ট আসার পর তাদেরও
করোনা পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ কামরুজ্জামান সোহেল জানান, মৃত ব্যক্তির শরীবে তিন ঘন্টার বেশী করোনা জীবানু
বাঁচে না। এ ছাড়া মৃত ব্যক্তির সৎকারের কমিটিতে চিকিৎসকদের রাখা হয়নি। আহাদের মৃত্যুর খবর জানার পর তিনি উপজেলা নির্বাহী
কর্মকর্তা ও ইসলামীক ফাউন্ডেশনের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *