চৌগাছায় টাকা ছাড়া কাজ হয় না নারায়ণপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে

ঘুষের চুক্তি শেষে অগ্রিম অর্ধেক টাকা দিলেই তবে কাজ করেন চৌগাছা উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভূমি সহকারী কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটিভি ডিওতে একজন সেবাপ্রার্থীর নামজারি করার চুক্তির টাকা নেওয়ার সময় এ কথা বলতে শোনা যায়। ভিডিওতে তিনি নায়েবকে বলছেন, আপনি এই সেবা প্রদানের জন্য সরকারি বেতনসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পান না? উত্তরে আব্দুর রাজ্জাক বলছেন,“ আপনার এই কাজ করতে এই অফিস থেকে উপজেলা সদরে ভূমি অফিসে আমাকে ১৪বার যাতায়াত করতে হয়। সেসব মিলিয়ে এবং আমার জনের দাম (শ্রমের দাম) এবং আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে যদি কিছু না দেন তাহলে তো কাজ হবে না। আর দরদামের টাকা মাজা পর্যন্ত (অর্ধেক) না দিলে তো কাজই শুরু হবে না। তিনি আরো বলেন এসব কাজ করতে সরকার বা অফিস আমাকে কোনো বাকি দেননা।

এই সেবা প্রার্থিকে বলেন, আপনার চাচা যে হাঙ্কিপাঙ্কি করেছে তাতে মনে করেছিলাম কাজই করবো না। তবে আপনার কথাবার্তা আমার ভাল লেগেছে তাই ৬ হাজারের মধ্যে অর্ধেক নিয়েই শুরু করেছি।

সরেজমিনে গত বুধবার (২৭ মার্চ) নারায়নপুর ভূমি অফিসে গেলে নায়েব আব্দুর রাজ্জাক অফিসে ছিলেন না। অফিসে বসে তার মুঠো ফোনে কল করলে তিনি বলেন আমি বাজার করে বাড়িতে চলে এসেছি। আজকে আর অফিসে আসছি না। তখন সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে এই সাড়ে ১২টার সময় আপনি বাড়ি কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন সকাল সাড়ে ৯টায় উপজেলা সদরে একটা মিটিং ছিল। সেটা শেষ করে বাজার করে বাড়িতে এসেছি। আপনি কি আপনার উর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে ছুটি নেওয়া বা বিষয়টি জানিয়েছেন প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে পরে কথা বলবো বলেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন তিনি।

সেদিন সেই ভিডিও এবং নায়েবকে অফিসে না পাওয়ার বিষয়টি উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) গুজ্ঞন বিশ্বাসকে জানালে তিনি জেলা প্রশাসককে জানাবেন বলে জানান। পরের দিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে তার অফিসে হাজির হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

সেদিনও বেলা ১২টার পরে দ্বিতীয়বারের মতো উপজেলা সহকারি কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) গুঞ্জন বিশ্বাসকে ফোন করে নায়েবের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেতো আমার কাছ থেকে কোনো ছুটিও নেয়নি বা আমাকে কিছুুই জানায়নি। নায়েব রাজ্জাককে নিয়মিত অফিসে পাওয়া যায়না বলে স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসককে জানাবেন বলেও জানান।

অফিসে থাকাকালীন সেবা প্রার্থী টেঙ্গুরপুর গ্রামের ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমার একটা জমি দখলমুক্ত করতে আদালতের আদেশনামা সত্বেও নায়েব রাজ্জাক আমার কাছে ২৫ হাজার টাকা দাবী করেন। পরে আমি ইউএনও অফিসের শরণাপন্ন হই এবং তাকে ৫ হাজার টাকাও দিই কিন্তু তিনি বিবাদী পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে আমার কাজটি করে দিচ্ছেন না। তখন আমি

আমার টাকা ফেরৎ চাইলে তিনি আমাকে অপেক্ষা করতে বলেন। ভূমি অফিস সংলগ্ন ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন এই নায়েবের দূর্নীতির কোনো সীমা নেই। তার এ অফিসে টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয়না। তিনি নামজারিসহ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন তদন্ত টাকার বিনিময়ে ওলটপালট করে থাকেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। বুন্দলিতলা গ্রামের উজ্জ্বল নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন আমার একটি জমির নামপত্তন করতে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন তিনি।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ি নামজারি করতে প্রথমে ২০টাকার কোর্ট ফি এবং ৫০ টাকা নোটিশ ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। এরপরে ১১শত টাকা দিয়ে ডিসিআর কেটে (ডুব্লিকেট কার্বন রশিদ) অনলাইন থেকে নাম পত্তনের কাগজ তুলে নিতে হয়। এক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশনার বাইরে ১টি টাকা নেওয়াও অবৈধ বলে জানান স্বপদহ ইউনিয়ন নায়েব আসলাম হোসেন।

নায়েবের বিষয়ে নারায়নপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহিনুর রহমান শাহিন বলেন, তার মতো দূর্নীতিগ্রস্ত নায়েব আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। তার লোভের কাছে ইউনিয়নবাসি অসহায় বলেও আক্ষেপ করেন তিনি।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *