জামাই- শাশুড়ীর অনৈতিক সম্পর্কের মিথ্যা ফতোয়ার ‍বিরুদ্ধে মামলা, মাওলানাসহ গ্রেপ্তার ৮

ফতোয়ার শিকার মা ও মেয়ে। ছবি: মর্নিং নিউজ ‍বিডি

অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের দেবোত্তর গরিলা গ্রামে সামাজিক ফতোয়া দিয়ে একটি অসহায় পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগে গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের। এঘটনায় ফতোয়াবাজ ওই এলাকার মেম্বার, মাতব্বরসহ ৮জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

সোমবার (১৫ জুন) গ্রাম্য মাতব্বরসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাহারুল ইসলাম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার (১৩ জুন) গ্রাম্য মাতব্বর ওসমান, রমজান, মকছেদ ও ইউপি সদস্য মোসাব্বের আলী যোগসাজশ করে রানীনগর মোল্লাপাড়া মসজিদের সামাজিক বিচার বসান। বিচারে শাশুড়ী-জামাইকে উপস্থিত রেখে শরীয়ত পরিপন্থী অপরাধের জন্য তওবা পড়ান ইমাম নুরুজ্জামান। এ কারনে শাশুড়ীর মেয়ে আর জামাইয়ের স্ত্রী থাকলো না বলে ফতোয়া দেন ওই মাওলানা। এরপর বাধ্য হয়েই স্বামীর ঘর ছেড়ে দুই সন্তানসহ মায়ের বাড়িতে অবস্থান নিতে হয় মেয়েকে। সেদিন থেকেই মা মেয়েকে একঘরে করে রাখা হয়। এরপর পরিবারটি সমাজের চোখে ধিকৃত ও অবজ্ঞার শিকার হয়।

সোমবার (১৫জুন) এ ঘটনার খবর পেয়ে গুরুদাসপুর থানা পুলিশ মা মেয়েকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। সেখানেই তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

ভুক্তভোগী শাশুড়ী বলেন, ৮জুন সোমবার রাত ৮টার দিকে রানীনগর মোল্লাপাড়া হয়ে জামাইকে নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় একই গ্রামের শুকচাঁদ, কামরুল, আতহার ও আলামিন নামে চার যুবক তাদের পথরোধ করে। অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ এনে তাঁদের (জামাই-শ্বাশুরী) বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকার দাবী করে। টাকা না দেওয়ায় অপপ্রচার চালিয়ে মাঝরাতে ছেড়ে দেয় তারা। হঠাৎ ১৩জুন তাদের বিরুদ্ধে ওই মিথ্যা ফতোয়া দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীর মেয়ে ও জামাই বলেন, মিথ্যা ফতোয়া দিয়ে তার স্ত্রীকে আলাদা করা হয়েছে। আইনের আশ্রয় নিতেও ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। তবে মামলার পর অন্যান্য আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছেন।

আরও পড়ুন: গুরুদাসপুরে ফতোয়া দিয়ে একটি পরিবারকে একঘরে

নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান শওকত রানা লাবু বলেন, বিষয়টি জানার পরে থানার ওসিকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছি।

ওসি মোজাহারুল ইসলাম বলেন, ওই ফতোয়াবাজ গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী মেয়ের মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন এবং মামলার প্রধান আসামীসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পলাতকদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *