তিস্তার পানিতে দুইদিন বন্দি আছি কেউ খোঁজ করে না!

ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে ধরলার ও তিস্তার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাট জেলার ৫ উপজেলায় তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

শুক্রবার (২৬ জুন) বিকেল ৬ টার দিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ৪৪ টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

শুত্রবার (২৬ জুন সকাল ৬টা ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সকাল ৯ টায় ৫২ দশমিক ৭৮, দুপুরে ১২ টায় ৫২ দশমিক ৭৮ ও বিকেল ৩ টায় ৫২ দশমিক ৮০,বিকলে ৬ টায় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদসীমার ১৮ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জানা গেছে, গত ৪৮ ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তার ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিস্তা ও ধরলার চর এলাকায় বন্যার দেখা দিয়েছে। গত দুই দিন থেকে জেলায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ১০ হাজার পরিবার। টানা বর্ষন ও নদীর পানি ঘর বাড়িতে প্রবেশ করায় রান্না করতে না পেরে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। পরিবার গুলো গত দুইদিনও সরকারী ভাবে কোন সাহায্য পায়নি।

পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, বাঘের চর, জিঞ্জির পাড়া,গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয় আনী, সিন্দুর্না, চর সিন্দুর্না পাটিকাপাড়া, হলদি বাড়ী,সিংগিমারী, ধুবনী, উত্তর ধুবনী, ডাউয়া বাড়ি, বিছন দই, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডারের আমিনগঞ্জ, কাকিনা,আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা,পলাশী,সদর উপজেলার চর বাসুনিয়া খুনিয়াগাছ, রাজপুর,গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

তিস্তা ও ধরলার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের সবজি, বাদাম ও ভুট্টাসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। মৎস্য খামারের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। তিস্তার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের পানিবন্দি পরিবারগুলো মধ্যে শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে।

হাতীবান্ধার উপজেলা গড্ডিমারী ৬নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা আমিনুর রহমান বলেন, দুই দিন ধরি পানি বন্দি আছি কেউ খোঁজ করে না। ঘরে পানি উঠায় রান্নাও করতে পারিনি।

হাতীবান্ধা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ফেরদৌস আহম্মেদ জানান,‘কালীগঞ্জ ও হাতীবান্ধার উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার পানি বন্দি পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে দ্রুত ত্রাণ দেওয়া হবে।’

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সকাল থেকে তিস্তা পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকেল থেকে পানি প্রবাহ বাড়ছে। তিস্তা পারের বসবাসরত পরিবার গুলোকে সতর্ক করা হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা প্রসাশক আবু জাফর জানান,পানি বন্দি পরিবারগুলোর চাহিদা মোতাবেক তালিকা করে দ্রুত ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *