প্রবলভাবে ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় হামুন, আঘাত হানতে পারে বুধবার

 

‘ঘূর্ণিঝড়প্রবণ’এই মাসে বঙ্গোপসাগরে অতিদ্রুত একটি ঘূনাবর্ত তৈরী হয়েছে। নিম্নচাপটি আজ সোমবার গভীর নিম্নচাপ অত:পর ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এ রূপ পরিগ্রহ করতে পারে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০কিলোমিটার। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাগর উত্তাল রয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানান, প্রবল শক্তি সঞ্চয় করে ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নিয়ে বাংলাদেশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসতে পারে। আগামী ২৫অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে ২৬অক্টোবর দুপুর ১২টার মধ্যে সরাসরি বাংলাদেশের খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের মাঝামাঝি এলাকার উপকূলে আছড়ে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপের অগ্রভাগে থাকা মেঘমালা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগেও এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।গতকাল রাজধানী ঢাকায়ও বৃস্টি হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ৪০কিলোমিটার, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৮৫কিলোমিটার, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৩৫কিলোমিটার এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এ সময় সব বন্দরকে ১নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলগুলো বিশ্লেষন করে জানান, বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। গতকাল রবিবার রাতের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার কথা।সম্ভাবনা রয়েছে গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্নিঝড়ে পরিণত হওয়ার। ঘূর্নিঝড় হামুন যদি আঘাত হানে তবে ওই সময় বাতাসের গড় গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭০-৮০কিলোমিটার, সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১০০-১১০কিলোমিটার। স্বাভাবিকের চেয়ে ৪-৭ফুট জলোচ্ছ্বাস হওয়ারও সম্ভাবনা আছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, আজ ২৩থেকে ২৭অক্টোবর পর্যন্ত বরিশাল ও খুলনা বিভাগে ২৫০-৪০০মিলিমিটার, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ১৫০-২৫০মিলিমিটার, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১০০-১৫০মিলিমিটার এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ৫০-১০০মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হতে পারে। সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হতে পারে- বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ফেনী, নোয়াখালী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলায়।

এদিকে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, আজ সোমবার মধ্যে গভীর নিম্নচাপ ও ঘূর্নিঝড়ে পরিণত হয়ে আগামী ২৬অক্টোবর নাগাদ এটি বাংলাদেশের খুলনা বরিশাল উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সব নির্দেশক বলছে এটি সাধারণ একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। সাধারণ ঘূর্ণিঝড় হিসেবেই এটি উপকূল অতিক্রম করতে পারে। সতর্ক সংকেত ৫, ৬ ও ৭ এর মধ্যে থাকারই সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। মহাবিপদ সংকেত জারির কোন আশঙ্কা আমরা এখনও দেখছি না।

আবহাওয়াবিদ আবদুর রহমান বলেন, এখন আরব সাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় রয়েছে। সেটি দুর্বল হলে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সিস্টেমটি সবল হবে। তবে বঙ্গোপসাগরেরটি সাধারণ (মার্জিনাল) একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। তিনি জানান, আগামী দিনগুলোতে উপকূল ছাড়াও দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও বৃষ্টি হবে। গভীর নিম্নচাপের পর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘হামুন’। নামটি ইরানের দেওয়া, যার অর্থ- সমতল ভূমি বা পৃথিবী। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার অধীন জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের ১৩দেশের(বাংলাদেশ, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ওমান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইরান, সৌদি আরব ও ইয়েমেন) আবহাওয়াবিদদের সংস্থা এস্কেপ ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়ে থাকে।

এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, বর্তমানে সাগরে ডুয়েল সিস্টেম বিদ্যমান। একটি হলো আরব সাগরে, অপরটি বঙ্গোপসাগরে। যেহেতু আরব সাগরে একটি সিস্টেম আছে, সেহেতু বঙ্গোপসাগরেরটারও কিছু একটা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমার মতে, বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, নিম্নচাপের প্রভাবে এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। নিম্নচাপের অগ্রভাগে থাকা মেঘমালা বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করেছে। বিশেষ করে উপকূলীয় জেলায় বৃষ্টি বেশি হতে পারে। চট্টগ্রাম, বরিশাল ও খুলনা বিভাগেও এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। প্রতি ৫০বছরের হিসাব অনুযায়ী(ওই তিন মাসে) দেখা যায়, ১৮৯১থেকে ১৯৪০সাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে মোট ১০২টি ঘূর্ণিঝড় উত্পন্ন হয়েছিল, ১৯৪১থেকে ১৯৯০সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১১৭টি এবং ১৯৯১থেকে ২০২১সাল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৫০টি হয়েছে। এ হিসাবে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, বঙ্গোপসাগরে বছরের শেষের দিকে ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।দিন দিন ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা কমে যাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে, আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি বাংলাদেশ।

 

মর্নিংনিউজ/বিআই/এআর

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *