“বানের পানির স্রোতোত বাড়ির অদ্দেক ছিড়ি গেইছে। ঘরে আচিল চেয়ার, টেবিল, হাড়ি, ডোগা, চাউল, ডাইল, শুক্যান খড়ি, গাছের কলা, হাসঁ, মুরগি সোউগ পানিত ভাসি গেইছে। ঐকনা সময়োত যতকোনা পাইচোং ততকোনা শুক্যানোত তুলি আইনচোং।” এভাবেই দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কথা বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের জগমনের চর এলাকার ধরলা নদীর তীরে বসবাসকারী মোঃ কাশেম আলী (৩৮)।
নদী ভাঙ্গন ও বন্যার পানির স্রোতে তার বাড়ির অর্ধেক ভেসে যাওয়ায় অবশেষে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে সে আশ্রয় নিয়েছে ইউনিয়নের ক্লিনিক পাড়ার মেইন রোডের পাশে। সেখানে তার পর্যাপ্ত জায়গা না মেলায় একদিকে আশ্রয়ের সংকট অন্যদিকে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে অনাহারে ও অর্ধাহারে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন সে।
সোমবার (১৩ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে জেলা সদরের ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ক্লিনিক পাড়ায় মেইন রোডের পাশে আশ্রয় নেয়া কাশেমের মতো অনেকের এমন চিত্র দেখা যায়।
জানা যায়, চলমান বন্যায় ধরলা নদীর পানির প্রবল স্রোতে কাশেমের বাড়ির রান্না ঘর, বাড়ীর বেড়া, আসবাবপত্র, শুকনো খড়ি, খাদ্যসামগ্রীসহ গবাদি পশু পানিতে ভেসে গেছে। কিছু জিনিস পত্র রক্ষা করতে পারলেও নদীগর্ভে ভেসে যাওয়া জিনিস পত্র উদ্ধার করতে না পারায় মনো কষ্টে ভুগছেন তিনি। শেষমেশ মেইন সড়কের পাশেও পর্যাপ্ত জায়গার সংকট ও খাদ্য সংকটে স্ত্রী সন্তানদের নিদারুন কষ্টে দিন পার করছেন সে।
কাশেম আলীর স্ত্রী শিউলি খাতুন জানান, বন্যার পানির স্রোতে রান্না ঘর ভেসে গেছে। ঘরে থাকা চুলা উদ্ধার করতে পারিনা। বন্যায় স্বামীর কাজকর্ম বন্ধ থাকায় সকাল থেকে না খেয়ে আছি। গতকাল রাতে এক প্রতিবেশী ভাত ও আলু ভর্তা খেতে দিয়েছে। আজ এখন পর্যন্ত সন্তানদের নিয়ে না খেয়ে আছি। ঘরে শুকনা খাবার না থাকায় স্বামী সন্তান নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছি।
কাশেমের প্রতিবেশী ছামাদ জানান, আমাদের বাড়ী ঘর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে আমার প্রতিবেশী কাশেমের রান্না ঘর সহ কিছু আসবাব পত্র পানিতে ভেসে যাওয়ায় খুবই খারাপ লাগছে।
আরও পড়ুন: বুড়িগঙ্গায় লঞ্চডুবি: মূল হোতা ময়ূর-২ লঞ্চের মাষ্টার গ্রেপ্তার
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ সাইদুর রহমান বলেন, আপাতত বরাদ্দ পাইনি। বরাদ্দ পেলে ওইসব ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সহায়তা প্রদান করা হবে।
উল্লেখ্য, উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে।
পানিবন্দী হয়ে পড়েছে জেলার ৯ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। তলিয়ে গেছে গ্রামীন জনপদ, বাড়ি-ঘর, রাস্তা-ঘাট, ফসলি জমি, স্কুল, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসমুহ।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, কুড়িগ্রামের সবগুলি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে ৯৪ সেন্টিমিটার, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৫ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ৬২ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।