নাটোরে এক সপ্তাহে ৭ জনের আত্মহত্যা

নাটোরে সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে আত্মহত্যা প্রবণতা। পারিবারিক কলহ, মানসিক বিষণ্নতা, মানুষে মানুষে সরাসরি যোগাযোগের অভাব ও তথ্যপ্রযুক্তির কারণে এককেন্দ্রিক হয়ে যাওয়াই প্রধান কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে সমাজে ঘটছে আত্মহননের মতো ঘটনা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নাটোরে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুএক জন মানুষ আত্মহত্যা করলেও চলতি সপ্তাহে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে সে সংখ্যা। যাদের বেশির ভাগই নারী। নারী-পুরুষ মিলিয়ে মোট আত্মহত্যাকারীদের বেশির ভাগের বয়স ২৫ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে। আত্মহননের উপায় হিসেবে সকলে গলায় ফাঁস দেওয়াকে বেছে নিয়েছে।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত ১২ জুলাই, নাটোরের বাগাতিপাড়ার উপজেলার মিস্ত্রিপাড়া গ্রামে স্বামীর উপর অভিমান করে নাদিরা খাতুন নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে।

গত ১১ জুলাই, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাহিমালী গ্রামে জেনি বেবী কস্তা (৪৫) নামে এক নারী ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজ শয়ন কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি দীর্ঘ ১৫ বছর স্বামী থেকে আলাদা হয়ে ঢাকায় চাকরি করতেন। করোনা কালে চাকরিচ্যুত হয়ে তার ভাই এর বাড়িতে অবস্থানকালে আত্মহত্যা করেন তিনি।

গত ১১ জুলাই, উপজেলার জোয়াড়ি ইউনিয়নের কায়েমকোলা গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে হায়াত আলী (৬০) নামে এক বৃদ্ধ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

এর আগে গত ৯ জুলাই, নাটোরের বাগাতিপাড়ার ডুমরাই সরকার পাড়া গ্রামে নিজ বাড়ির পাশে একটি বাগান থেকে মহরম হোসেন (৫০) নামে এক ব্যক্তির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

আরও পড়ুন: বানের পানির স্রোতোত বাড়ির অদ্দেক ছিড়ি গেইছে

গত ৬ জুলাই, নাটোরের বড়াইগ্রামের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে পিটার কস্তা (৪২) নামে এক ব্যবসায়ী নিজ বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অধিক লাভের আশার চড়া সুদে ঋন নিয়ে ব্যবসায় করছিলেন। কিন্তু করোনার কারণে সে ব্যবসাতে লোকসান হয়। এসময় ঋণের কিস্তি ঠিকমত পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেন তিনি।

গত ৬ জুলাই, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার গোপালপুর উত্তরপাড়া গ্রামে ঋতুস্রাবের যন্ত্রণা সইতে না পেরে তানজিলা খাতুন শিল্পী (১৬) নামে এক স্কুল ছাত্রী গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন। এদিকে একই দিনে উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নের কচুগাড়ী গ্রামে মায়ের উপরে অভিমান করে নিজ শয়ন কক্ষে গলায় ফাঁস দিয়ে সোহাগী খাতুন (২৫) নামে এক নারী আত্মহত্যা করে।

মনোবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাসুদুল হক সিদ্দিকীর মতে, সাধারণত অতিমাত্রায় বিষণ্নতায় আক্রান্ত ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। তবে বিষণ্নতার কারণে এখন তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। কারন তরুন প্রজন্মের মাঝে সবচেয়ে বেশি আবেগজনিত বিষয় কাজ করে।

মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে তিনি বলেন, হতাশা ও বিষণ্নতার কথাগুলো আশেপাশের কারো সাথে খোলামেলা আলোচনা করা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে। আর কাউন্সিলিং বৃদ্ধি করতে পরিবার কেই এগিয়ে আসতে হবে। আত্মহত্যা কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *