বাংলাদেশের মাটিতে ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে। রাজনগর গ্রামে এই জাতের পেঁয়াজের চাষ হয়। বর্ষাকালে দেশে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ হয়। দেশে উৎপাদিত শীতকালীন পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর হু হু করে বাড়তে থাকে অতিপ্রয়োজনীয় এই খাদ্য পণ্যটির দাম। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়ে চাহিদা মেটাতে হয়। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে বাড়তে শুরু করে। আবার আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ ডলার। তাই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে বদ্ধপরিকর কৃষি বিভাগ।
গত সেপ্টেম্বর, অক্টবর ও নভেম্বরে পিয়াজ সংকট কমাতে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়াতে শুরু হয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ। এবার বর্ষা মৌসুমে শুধু যশোরের শার্শায় প্রায় ৩২হাজার হেক্টর জমিতে ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এই পেঁয়াজের বীজ, সার, বীজতলা করার পলিথিন, সুতলি রশিসহ অন্যান্য সব উপকরণ চাষিদের বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। গত সেপ্টেম্বরে চাষিরা বীজতলা করেন। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন পেঁয়াজ উঠছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে শার্শায় ১৪হাজার ১৪৫হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৯উপজেলায় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় ৪হাজার হেক্টর জমিতে। এই পেঁয়াজ চাষে ৪০০জন চাষিকে এক কেজি করে বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। চলতি মৌসুমে ২৪০হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ২০হাজার ৪২২মেট্রিক টন। অধিক ফলন হওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন কৃষি বিভাগ।ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। কৃষক বিঘাপ্রতি ফলন পাচ্ছেন ৭০থেকে ৮০মণ। লাল রঙের বড় বড় প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন হচ্ছে ২৫০থেকে ৩৫০গ্রাম। ফলন ভালো হলেও বাজারে অবশ্য পেঁয়াজের দাম এখন কম। তাই চাষিদের একটু মন খারাপ। তারপরও লাভের আশা করছেন তারা।
যশোর শার্শা উপজেলার রাজনগর গ্রামের কৃষক মন্নাফ ২বিঘা ২কাঠা জমিতে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। ছোটগুলো রেখে সম্প্রতি তিনি জমি থেকে পেঁয়াজ তুলেছেন ৫৮মণ। আরও পেঁয়াজ উঠবে তার জমি থেকে।
তিনি বলেন, বিঘাপ্রতি এই পেঁয়াজ চাষে খরচ ২০থেকে ২৫হাজার টাকা। দাম ভালো থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এত বড় পেঁয়াজ দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে জমিতে থাকতেই পচন ধরবে। কিন্তু বৃষ্টি হলেও পেঁয়াজ পচেনি। বরং, ফলন ভালো হয়েছে। পাট কিংবা আউশ ধান তোলার পরে জমিটা আগে পতিত পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি আয় হলো। আগামী বছরও এই পেঁয়াজ চাষ করবো।
শার্শা সুর্বণ খালী এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার জানান, শীতকালে তাদের এলাকায় স্থানীয় ‘তাহেরপুরী’ নামের একটি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। বর্ষাকালে দেশে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ হয়। কিন্তু এই পেঁয়াজের বীজের খুব সংকট। এ জন্য শার্শায় বর্ষাকালে কোনো পেঁয়াজই চাষ হতো না। এবার নাসিক-৫৩ চাষ হয়েছে।