বংলাদেশের উত্তর প্রান্তের শীত প্রধান উপজেলা তেঁতুলিয়ায় এবারও মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে শীতের দেশের বিদেশি ফুল টিউলিপ। গতবছর পরিক্ষামূলক চাষের পর এবার বাণিজ্যিক আকারে চাষ করছেন উপজেলার দর্জিপাড়া গ্রামের ২০ জন নারী উদ্যোক্তা। অপরুপ সৌন্দর্য্যরে এই ফুল দেখতে প্রতিদিন হাজারো দর্শনার্থী ছুটে আসছেন। ফুলের বাহার, দর্শনার্থীদের পদচারণা আর টিউলিপে বাণিজ্য পর্যটন ক্ষেত্রে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে তেঁতুলিয়ায়। দর্শনার্থীরা বলছেন টিউলিপ দেখতে পেয়ে তারা মুগ্ধ। দশ রঙের দশ প্রজাতির হাজার হাজার ফুল দেখে দর্শনার্থীরা অবাক। তাদের চোখে বিস্ময়। নেদারল্যান্ডস, কাশ্মীর বা তুরস্ক নয় ঠাণ্ডার দেশের ফুল টিউলিপ মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছে আমাদের নিজেদের দেশেই। ফুলের মিষ্টি অনুভূতি হৃদয়ে মাখবার জন্য তাই ছুটে আসছেন তারা। দর্শনার্থীরা বলছেন হিমালয়ান সমতল অঞ্চল তেঁতুলিয়ায় এমনিতেই সারা বছর দর্শনার্থীদের ভিড় লেগেই থাকে। এবার টিউলিপ আরও নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এ বছর দশ প্রজাতির টিউলিপ দশ রঙে রাঙিয়েছে দর্জিপাড়া গ্রাম। জন প্রতি ৫০ টাকা এবং শিশুরা বিনামূল্যে টিকেট কেটে ঢুকছেন টিউলিপ বাগানে। টিউলিপের প্রজাতি ও রংগুলো হচ্ছে- অ্যান্টার্কটিকা (সাদা), ডেনমার্ক (কমলা ছায়া), লালিবেলা (লাল), ডাচ সূর্যোদয় (হলুদ), স্ট্রং গোল্ড (হলুদ), জান্টুপিঙ্ক (গোলাপি), হোয়াইট মার্ভেল (সাদা), মিস্টিক ভ্যান ইজক (গোলাপি), হ্যাপি জেনারেশন (সাদা লাল শেড) ও গোল্ডেন টিকিট (হলুদ)। তেঁতুলিয়া শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরেই সবজি গ্রাম বলে খ্যাত দর্জিপাড়া গ্রাম। গত বছর এই গ্রামে ২০ শতক জমিতে স্থানীয় নারী কিষানীদের সংগঠিত করে পরীক্ষামূলক ভাবে টিউলিপ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোস্যাল ডেভলেপমেন্ট অর্গানাইজেশন ‘ইএসডিও’। এবার ২০ জন নারী কিষাণী প্রায় দুই একর জমিতে টিউলিপ চাষ করেন। গত ১০ জানুয়ারি টিউলিপের বীজ রোপন করা হয়। রোপনের ১৮ দিনের মাথায় টিউলিপ রং ছড়িয়ে ফুটতে থাকে। নারী উদ্যোক্তারা বলছেন, গত বছর টিউলিপ চাষ করে তারা ভালো লাভবান হয়েছেন। এবারও তাদের ফুল দেখতে হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছেন। তারা ফুল কিনছেন এবং ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় টিউলিপ রপ্তানি করছেন তারা। উদ্যোক্তা মোর্শেদা বেগম জানান, গতবছর ৫ শতক জমিতে টিউলিপ চাষ করে সফল হয়েছি। এবার তাই ২০ জন মিলে এক একর জমিতে ৮৫ হাজার টিউলিপের চারা রোপন করি। ১৫ হাজার বিজ রোপন করি টবে। হাজার হাজার পর্যটক ছুটে আসছে। অন্যান্য ফশলের থেকে লাভজনক। অল্প সময় মাত্র আঠারো থেকে বিশ দিনের মধ্যে টিউলিপ চাষ করা যায়। তাই সহযোগিতা পেলে প্রতিবছর টিউলিপ চাষ করবো। টিউলিপ এবং পর্যটনকে মাথায় রেখে ভবিষ্যতে আরও নানা উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানালেন ইএসডিও কর্তৃপক্ষ। ইএসডিওর পরিচালক ( প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার জানান, দর্জিপাড়া গ্রামকে ফুলের পর্যটন হিসেবে আমরা গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু টিউলিপ নয় আরও নানা প্রজাতির ফুল চাষে নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতা দেয়া হবে। তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, শীত প্রধান এলাকা হওয়ায় তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ চাষ করা সম্ভব। বাণিজ্যিক আকারে এখানকার নারী উদ্যেক্তারা সফল হয়েছে। লাভজনক যে কোন কৃষিতে সরকার সহযোগিতা দিচ্ছে। সরকারের এই পরিকল্পনাকে সফল করতে আমরা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা করছি।
মর্নিংনিউজ/আই/শাশি