ব্লাক হোল সন্ধানে তিন পদার্থবীদের যাত্রা, অর্জনে নোবেল

এই মহাবিশ্বের অন্যতম বিস্ময় ঘেরা আর রহস্যময়তা ভরা ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার এত বছর পর স্বীকৃতি পেলেন পদার্থবিদ্যায় তিন গবেষক, অর্জন করলেন নোবেল বিজয়ীর খেতাব।

ছবি : সংগৃহীত

রয়েল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস সুইডেনের একটি বিজ্ঞান বিষয়ক প্রতিষ্ঠান যা পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নে নোবেল পুরস্কার দিয়ে থাকে। আর এইবার এই পুরস্কারের জন্য যুক্তরাজ্যের স্যার রজার পেনরোজ এবং জার্মানির রাইনার্ড গেনসেল ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্দ্রেয়া গেজের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

ব্ল্যাক হোল মহাকাশের এমন একটি এরিয়া যেখানে মাধ্যাকর্ষণের শক্তির মাত্রা এতটাই প্রচণ্ড থাকে, যে সেখান থেকে কোনো প্রকারের কণা বা আলোর মত বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় কোন আলো বেরিয়ে আসতে পারে না।

বড় নক্ষত্র গুলো যখন তার পর্যাপ্ত বয়সসীমা শেষ করে একদম চুপসে যায়, তখন এর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি প্রচণ্ড মাত্রা পায়, আর যখন ক্ষুদ্র আয়তনের ভেতরে এর বিপুল পরিমাণের ভর সন্নিবেশিত হয়, ঠিক তখনই তা পরিণত হয় রহস্যময়ী ব্লাক হোলে। আলো বেরিয়ে আসতে পারে না বলে, ব্ল্যাক হোল দেখাও যায় না। চারপাশে যে জায়গা পর্যন্ত ওই মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কার্যকর থাকে, তাকে বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন।

জার্মান আলবার্ট আইনস্টাইন ১৯১৫ সালে এই ব্ল্যাকহোলের উপর একটি তত্ত্ব পেশ করেন, পরে তার ওই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করেই ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্বের ধারণা আরো জোর পায়।

১৯৬৫ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গাণিতিক পদার্থবীদ রজার পেনরোজ, গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে তিনি দেখিয়ে দেন ব্ল্যাক হোল সত্যিই থাকা সম্ভব। আর কীভাবে তা তৈরি হয়, তাও তিনি গাণিতিক সমাধানে দেখিয়ে ছিলেন। আইনস্টাইনের তত্ত্বের পর পেনরোজের ওই গাণিতিক সমাধানকেই পদার্থ বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশাল গবেষণামূলক কাজ বলে বিবেচনা করা হয়।

১৯৯০ সালের দিকে জার্মানির ম্যাক্স প্লাংক ইনস্টিটিউট ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ফিজিক্সের গবেষক রাইনার্ড গেনসেল এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আন্দ্রেয়া গেজ আলাদা দুই দল জ্যোতির্বিদকে নিয়ে নজর রাখছিলেন মহাকাশের এই ছায়াপথের ঠিক মধ্যবর্তী এলাকার একটি অংশে, যাকে বলা হয় ‘স্যাগিটেরিয়াস এ*’। তারা লক্ষ্য করেন এই এলাকার পথেই একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র রয়েছে। যার কক্ষপথ পরিমাপ করতে গিয়ে দুই দলই এক অদৃশ বস্তুর সন্ধান পান, দেখলেন এই অদৃশ্য বস্তু প্রচণ্ড শক্তিতে আশপাশের নক্ষত্রগুলোকে টানছে। এটি আকারের দিক থেকে সূর্যের চেয়ে ছোট, কিন্তু এর ভর সূর্যের ভরের প্রায় ৪০ লাখ গুণেরও বেশি।

আসলে তাদের ওই গবেষণার মধ্য দিয়েই আমরা জানতে পারি, আমাদের মহাকাশের ঠিক কেন্দ্রে বিপুল আকারের এক বিশাল ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব বিদ্যমান রয়েছে।

২০২০ সালে এবারের নোবেল পুরস্কার পেলেন ৮৯ বছর বয়সী স্যার রজার পেনরোজ। ৬৮ বছরের রাইনার্ড গেনসেল এবং ৫৫ বছরের আন্দ্রেয়া গেজ। নোবেল পুরস্কারের সম্মাননা এই তিন পদার্থবীদের মাঝে বণ্টিত হবে।

 

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *