‘আমিও সাংবাদিক পরিবারের একজন সদস্য’: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহিত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকতার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার সাংবাদিকতার সঙ্গে একটা সম্পর্ক ছিল। সেদিক থেকে আমি দাবি করতে পারি– আমিও সাংবাদিক পরিবারেরই একজন সদস্য। সেভাবেই আমি আপনাদের দেখি।

রবিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির রজতজয়ন্তী-২০২০ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।

সাপ্তাহিক মিল্লাত, দৈনিক ইত্তেহাদ ও দৈনিক ইত্তেফাকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর জড়িত থাকার কথা এবং তার বাংলার বাণী প্রতিষ্ঠা করার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আমি নিজেকে ‘সাংবাদিক পরিবারের একজন’ বলেই মনে করি।

জাতির জনকের স্মৃতি রোমন্থন করে তার কন্যা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন কলকাতায় পড়াশোনা করতেন, তখন একটা পত্রিকা বের করা হয়েছিল সাপ্তাহিক মিল্লাত, তার সঙ্গে উনি জড়িত ছিলেন। সেটি বেশি দিন চলেনি। এর পর ইত্তেহাদ নামে একটি পত্রিকা বের হয়। সেই পত্রিকার সঙ্গে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এর পর পাকিস্তান হওয়ার পর যখন সবাই বাংলাদেশে চলে আসে, তখন ইত্তেফাক বের করা হয়। সেখানেও কিন্তু বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। আবার আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি পত্রিকা তিনি বের করেছিলেন ‘নতুন দিন’ নামে। পরে জাতির পিতা সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন।

‘১৯৫৮ সালে মার্শাল লর পর তিনি যখন গ্রেফতার হন, এর পর উনি যখন মুক্তি পান, সেই ১৯৬১ সালের দিকে, তখন থেকেই কিন্তু এই সাপ্তাহিক বাংলার বাণী বের করেন।’

সাংবাদিকদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মানবকল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিকতা যেন ‘নীতিহীন’ না হয়।

সরকারপ্রধান গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা নিশ্চয় দায়িত্বশীলতা নিয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে, মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে কাজ করবেন।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রতিবেদন যে সরকারের কাজেও সহায়ক হয়, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিভিন্ন পত্রিকায় অনেক সময় অনেক ঘটনা আসে। সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু আমরা সেটি… সেই রিপোর্ট দেখে কিন্তু অনেক মানুষকে, অনেক অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াই, আবার অনেক অন্যায় ঘটনা ঘটলে তার প্রতিকারও করতে পারি, অনেক দোষীকেও আমরা শাস্তি দিতে পারি এবং দিয়ে থাকি।

সাংবাদিকতায় ঝুঁকির বিষয়টি সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হ্যাঁ, অনেক ঝুঁকি নিয়ে আপনারা অনেক সময় রিপোর্ট করেন। সে জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি এটুকু অনুরোধ করব যে আপনারা যেমন ধন্যবাদযোগ্য কাজও করেন, কিন্তু এমন রিপোর্ট করবেন না যেটি মানুষের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে বা মানুষ বিপথে যায়। সেদিকেও আপনাদের বিশেষ করে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।

‘জাতির পিতা বলেছিলেন– নীতিহীন রাজনীতি দেশ ও জাতিকে কিছু দিতে পারে না। তেমনি নীতিহীন সাংবাদিকতা দেশের কোনো কল্যাণ করতে পারে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে’, তিনি যোগ করেন।

বঙ্গবন্ধুর আরেকটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রের একটা নীতিমালা আছে। সাংবাদিকতার একটা নীতিমালা আছে। এই দুটো মনে রাখলে আমরা অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব।

সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সেই নীতিমালা মেনে চলতে সংবাদকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

গণভবনে এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন তার মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

আর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে মূল অনুষ্ঠানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম আজাদ, সহসভাপতি নজরুল কবীর, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ চৌধুরীসহ সংগঠনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *