চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমছে

দেশের ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন কমতির দিকে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাল, ডাল, তেল, চিনি থেকে পেঁয়াজ, আদা, রসুনের দাম কমে এসেছে। করোনা সংক্রমণে ত্রাণ, বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়ে আসায় পণ্য সরবরাহ বৃদ্ধি ও বাজারে ক্রেতার চাপ কমে আসায় ভোগ্যপণ্যের দাম কমে এসেছে বলে জানান ব্যবসায়ী-আমদানিকারকেরা।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ছোলা বিক্রি হয়েছে বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি ৫৯ টাকা। গত সপ্তাহে তা কেজিতে ৬৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝারি মানের ছোলা বিক্রি হয়েছে ৫৭ টাকা দরে। আগে তা বিক্রি হয়েছে ৬৩ টাকায়। গত মাসে অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা থেকে আমদানি করা উন্নতমানের ছোলা ৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। সাদা মটর বিক্রি হচ্ছে মান ভেদে ৩৫-৩৭ টাকা দরে। গত সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছে কেজিতে ৪১ টাকা দরে। এর আগে করোনো ভাইরাস সংক্রমণের পর ২৮-৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।

করোনা ভাইরাস ও রমজানকে ঘিরে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে হু হু করে বেড়েছিল ডালের দাম। দুই মাস ধরে ডালের দাম বাড়তি ছিল। বুধবার খেসারি ডাল বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৮৫ টাকা দরে। গেল সপ্তাহে তা বিক্রি হয়েছে ৯৩-৯৫ টাকা কেজি। চিকন মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ১০৩ টাকা দরে। যা আগে বিক্রি হয়েছে ১১০-১১২ টাকা দরে। মোটা মসুর বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৬৮ টাকা দরে। গত সপ্তাহে যা বিক্রি হয়েছে ৭৮ টাকায়। মটর ডাল কেজিতে ৪২ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ টাকা দরে। গত মাসে তা ৪৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, করোনা সংক্রমণের প্রভাব ও রমজান মাসকে ঘিরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে ক্রেতার চাপ ছিল। এছাড়াও বন্দরের পণ্য খালাস স্বাভাবিক হয়ে আসায় ভোগ্যপণ্যের জোগান বেড়েছে।

বাজারে অতিরিক্ত চাপ কমে আসা এবং পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় সব ধরনের পণ্যের দাম এখন কমতির দিকে রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, লকডাউন শিথিল হয়ে আসায় মানুষ এখন ঈদ ও কর্মমুখী হয়ে পড়ছে। বাজারে অতিরিক্ত চাপ কমে আসায় পণ্যের দাম আরও কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাইকারি বাজারে ছোলা-ডালের মতো চিনি ও চিড়ার দাম বাড়তি ছিল। চিড়ার দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছিল। প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিড়া মান ভেদে ১৪-১৫শ টাকা থেকে বেড়ে ২৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। গত কয়েক দিনে তা কমে বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ১৯শ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা দরে। পাইকারি বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২০৫০ টাকা (কেজি ৫৫ টাকা) দরে। কয়েক দিন আগে চিনি বিক্রি হয়েছে বস্তাপ্রতি ২১৭০ টাকা দরে। কেজি ৫৯ টাকা। দেড় মাস আগে চিনি বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে।

করোনা সংক্রমণের পর ভোগ্যপণ্যের অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে বেড়েছিল ভোজ্যতেলের দামও। বর্তমানে পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে মণপ্রতি ২১৫০ টাকা দরে। কয়েক দিন আগে তা বিক্রি হয়েছে ২৪শ টাকায়। দেড় মাস আগে তা দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা সয়াবিনের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩২শ টাকা দরে। তবে বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা কমেছে। রূপচাঁদা, এস আলম ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯৫-৯৬ টাকা। কয়েক দিন আগে তা বিক্রি হয়েছে ব্র্যান্ড ভেদে ১০৪-১০৬ টাকা দরে।

পাইকারি বাজারে মসলা জাতীয় পণ্য আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দামেও তেজিভাব নেই। দাম এখন কমতির দিকে। মাস খানেক আগে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজি দরে। করোনো সংক্রমণের পর ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি কমে যাওয়ায় পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যায়। গত সপ্তাহে ভারতীয় আমদানি করা ভালোমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজি প্রতি ৫০-৫৫ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকায়। মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৩৫-৩৮ টাকা দরে। দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪৫-৫০ কেজি। এিখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। মেহেরপুরের পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে।একইভাবে কমেছে আদা ও রসুনের দামও। গতকাল পাইকারি বাজারে চীন থেকে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হয় ১১৬-১২০ টাকায়। গত সপ্তাহে পণ্যটির দাম ছিল কেজিপ্রতি ১৫০ টাকা।

পাইকারি বাজারে আমদানিকারকদের কারসাজিতে আদার বাজার অস্থির ছিল। জেলা প্রশাসকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে আদার কারসাজি ধরা পড়ে। ৮২ টাকায় আমদানি করা আদা পাইকারি বাজারে লাফিয়ে বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ২৫০ টাকা দরে। প্রশাসনের অভিযানের পর তা এখন ১৩০ টাকায় নেমে এসেছে।একইভাবে জিরার দাম কেজিতে কমেছে ১১০ টাকা। গতকাল পণ্যটি বিক্রি হয় ৩১০ টাকায়। কয়েক দিন আগে তা বিক্রি হয়েছে ৪২০ টাকা দরে।

পেঁয়াজের আড়তদার মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, করোনা সংক্রমণের পর আমদানি সংকট ও বাজারে অতিরিক্ত চাহিদা থাকায় দাম বাড়তি ছিল। এখন আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় বাজারে জোগান বাড়ায় মসলা জাতীয় পণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে।

এদিকে, বাজারে নতুন চাল আসতে শুরু করায় চালের দামও বস্তাপ্রতি দুইশ টাকা করে কমেছে।

চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির সভাপতি শান্তু দাশগুপ্ত জানান, নতুন বেতি-২৮ চাল দুই হাজার টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকায়। বেতি-২৯ চাল ১৯শ টাকা থেকে কমে ১৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মোটা আতপ বস্তাপ্রতি দুই হাজার টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১৮শ টাকা দরে। মোটা সিদ্ধ ১৮শ টাকা থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ১৬শ টাকায়। বাজারে অতিরিক্ত চাপ কমে আসা এবং নতুন চাল বাজার আসতে শুরু করায় চালের দাম কমতি রয়েছে বলে জানান শান্তু দাশগুপ্ত।

চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ও সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি আগের তুলনায় স্বাভাবিক হয়ে সরবরাহ সংকট কেটে যাওয়ায় দাম কমছে নিত্য পণ্যের। এছাড়াও সরকারের নজরদারি বৃদ্ধির কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। দাম আরও কমে আসবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *