ঢাকার দোহার উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদীটি এখন প্রতিনিয়ত গিলে খাচ্ছে কৃষিজমি, বসতবাড়িসহ অসংখ্য স্থাপনা। সম্প্রতি পদ্মার ভাঙ্গনে উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের মৈনটঘাট খ্যাত মিনি কক্সবাজার এলাকাটির অধিকাংশ নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে বালির বস্তা, জিও ব্যাগ ফেলে অস্থায়ীভাবে ভাঙ্গন ঠেকানোর চেষ্টা করা হলেও সর্বনাশা পদ্মার ভাঙ্গন যেন কোন মতেই যেন থামছে না। ফলে দোহারবাসীর দুঃখ পদ্মার আর এই ভাঙ্গন বন্ধ না হলে মিনি কক্সবাজার নামক বিনোদন কেন্দ্রের সর্বশেষ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হওয়া এখন সময়ের ব্যাপারমাত্র বলে জানায় এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা জানায়, এবছর বর্ষার শুরুতেই পদ্মার ভাঙ্গন শুরু হয়। এতে করে পদ্মার তীরবর্তী এলাকা মাহমুদপুরে মৈনটঘাটসহ পদ্মা নদী সংলগ্ন পুরুলিয়া, দেওভোগ, নারায়নপুর, চরকুসুমহাটীসহ আশেপাশের মানচিত্র অনেকটাই বদলে যাচ্ছে। এ বিষয়ে শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের অধিবাসী কৃষক সালাম সিকদার বলেন, মৈনটঘাট এলাকায় তার দেড় বিঘা জমি ছিলো তিনি এ জমিতে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদন করে বিক্রি করতেন কিন্তু জমিটি অতি সম্প্রতি পদ্মায় বিলিন হয়ে যায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন । তিনি বলেন পদ্মার ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না গেলে অসংখ্য মানুষ জমি, বসতবাড়ি হারিয়ে পথে বসতে হবে। বালু বস্তা ফেলা হলেও তা ধসে গিয়ে পদ্মায় বিলীন হচ্ছে।
কয়েক দিন আগে পদ্মার ভাঙ্গনে যারা দোকানপাট হারিয়েছেন, এমন বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর হচ্ছেন মো. ফালান, উমেদ আলী, সবুজ , দেলোয়ার ও রাজ্জাক। কিছু দিন আগেও যাদের মুখে হাঁসি ছিলো, পকেটে ছিলো টাকা আজ তারা অনেকটাই অসহায়। তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় অনেক অজানা তথ্য। আজ যেখানে পদ্মা এসে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে প্রায় দুই মাইল দূরে ছিলো পদ্মা নদী ৫বছর আগে। গত দুই বছর তেমন ভাঙ্গন দেখা যায়নি যার কারনে অনেকেই পরিবার পরিজন নিয়ে বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে মাসিক, সাপ্তাহিক ও দৈনিক কিস্তিতে সুদে টাকা নিয়ে মিনি কক্সবাজার এলাকায় ব্যবসা শুরু করেন। ভ্রমন পিয়াসু মানুষের আনাগোনায় বেঁচাকেনা ভালোই হচ্ছিলো। কিন্তু এবছর হঠাৎ পদ্মার তীব্রতর ভাঙ্গনে সব মিলে প্রায় একশত ৮০ টি দোকান নদীতে বিলিন হয়ে যায়। এতে করে অনেকেই এখন অসহায় জীবন যাবন করছে। এনজিওর কিস্তি দেওয়াতো দূরের কথা অনেকের পরিবার পরিজন নিয়ে চলাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।
অপরদিকে মৈনটঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী আবুল কাশেম মেম্বার ও আতা চৌধুরী বলেন, ইতিমধ্যে একাধীক খাবারের হোটেল পদ্মায় ভেঙ্গে গেছে। ঝুকিতে আছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৈনটঘাটের একাধীক ব্যক্তি বলেন, পদ্মা থেকে কতিপয় প্রভাবশালী চক্র রাতের আধারে মাটি ও বালু অবৈধভাবে উত্তোলন করে বিক্রি করার কারনে ভাঙ্গন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করেন তারা।
সরেজমিনে দেখা যায়, চলমান ভাঙ্গনের কবলে পড়ে মৈনটঘাটের বিনোদন কেন্দ্র মিনি কক্সবাজার তার জৌলস হারিয়েছে। কমে গেছে দর্শনার্থীদের ভিড়। ইতিমধ্যে ঢাকা গুলিস্থানগামী দ্রুতি ও যমুনা পরিবহনের বাস কাউন্টারটির অধিকাংশ পদ্মায় বিলিন হয়ে গেছে। হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারনে এ ভাঙ্গন শুরু হয়। নদীর তীরবর্তী অসংখ্য নিচু জমি পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় জনসাধারণ ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে ভাঙ্গন আতংক বিরাজ করছে বর্তমানে। বাহ্রাঘাট থেকে মৈনট মিনি কক্সবাজার হয়ে বিলামপুর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার ব্যাপী এ ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে এ বছর।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, পদ্মার ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ণ বোর্ডের তত্তাবধায়নে জরুরী ভিত্তিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষনিক নজর রাখছে। যেকোন জরুরী অবস্থায় প্রশাসন জনসাধারনের পাশে আছে বলেও জানান তিনি।
মর্নিংনিউজ/বিআই/আস