কেশবপুর উপজেলা প্রতিনিধি : যশোরের কেশবপুরে স্বামীর পরকীয়ার জেরে সুলতানা ইয়াসমিন(২৭) নামের এক পাষন্ড মা ১৪দিনের জমজ ছেলে-মেয়েকে বাড়ির পাশের ডোবায় জ্যান্ত ডুবিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কেশবপুর পৌরসভার সাহাপাড়া সংলগ্ন এলাকায়। এই খবর পেয়ে পুলিশ ডোবা থেকে জমজ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে এবং ঘাতক মাকে আটক করেছে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ২৪এপ্রিল কেশবপুর পৌর শহরের সাহাপাড়া এলাকার আব্দুল লতিফের মেয়ে সুলতানা ইয়াসমিনের সাথে আবু বক্কর সিদ্দীকের বিবাহ হয়। দুইজনের বিয়ের পূর্বেই তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বিবাহ ছিলো। সুলতানা ইয়াসমিনের প্রথম স্বামীর অহনা(১১) নামের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সুলতানা বুঝতে পারে তার স্বামী আবু বক্কার অন্য নারীতে আসক্ত। সেজন্য স্বামীকে সুপথে ফেরাতে বাচ্চা গ্রহণ এর সিদ্ধান্ত নেয় সুলতানা।
কিছুদিন পর সুলতানা গর্ভে সন্তান আসে। সুলতানার গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় স্বামী আবু বক্কার আবারো বেপরোয়া জীবন-যাপন শুরু করে। তবুও সুলতানা তার গর্ভের সন্তান ভূমিষ্ট হলে স্বামীর চরিত্র পরিবর্তন হতে পারে বলে মনে করে। গত ১০নভেম্বর রাতে কেশবপুর পৌর শহরের মাতৃমঙ্গল ক্লিনিকে সিজারের মাধ্যমে সুলতানার জমজ ছেলে ও মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। জন্মের পর থেকে জমজ শিশুদের শারীরিক জটিতলা দেখা দিলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যায়। সেখানে চার দিন চিকিৎসার পর বাচ্চাদেরকে বাড়িতে নিয়ে আসে। পুত্র সন্তানটি জন্মের পর থেকে ফুসফুস, রক্তসহ বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিলে কেশবপুর হোসেন প্যাথলজিতে ডাক্তার কামরুজ্জামানের অধিনে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সুস্থ্য না হওয়ায় গত ২১নভেম্বর পুত্র সন্তানটিকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয় পুনরায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাবে।
ইতোমধ্যে ২১নভেম্বর দিবাগত রাতে পুত্র সন্তানটি নিন্তেজ হয়ে যায়। ওইসময় সুলতানা মৃতপ্রায় ওই পুত্র সন্তানটিকে বাড়ির পাশের ডোবায় নিক্ষেপ করে। এরপর ঘরে ফিরে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং কন্যা সন্তানটিকেও সকলের অগোচরে একই ডোবায় জীবন্ত নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে সুলতানা ঘরে ফিরে বাচ্চাদের পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে মিথ্যা কাহিনীর সৃজন করে। পরিবারের সকল সদস্যরা বাচ্চা দুটিকে খোজাখুজি করতে থাকেন। ওইসময় সুলতানার পিতা আব্দুল লতিফ বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফোন করে থানার পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে খোজাখুজির একপর্যায়ে বাড়ির পাশে ডোবা থেকে প্রথমে পুত্র সন্তানটির মৃতদেহ উদ্ধার করেন এবং অতঃপর নিখোঁজ কন্যা বাচ্চাটিকে খুঁজতে থাকেন। পরবর্তীতে কন্যা সন্তানটির মৃত অবস্থায় একই ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিকভাবে সুলতানা ইয়াসমিনসহ তার পরিবারের সকল সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদে সুলতানা তার পুত্র সন্তানসহ জীবিত কন্যা সন্তানটিকে সকলের অগোচরে ডোবায় নিক্ষেপের কথা স্বীকার করেন। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে প্রতীয়মান হয় যে, সুলতানা ইয়াসমিন স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিজ সন্তানদেরকে ডোবায় নিক্ষেপ করে হত্যা করেছে। তাছাড়া পুলিশ তার অন্য কোন অবৈধ সম্পর্ক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এ্যান্ড অপারেশন) জনাব বেলাল হোসাইন বুধবার দুপুরে কেশবপুর থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মর্নিংনিউজ/বিআই/এসএ