পাইপলাইনে গ্যাস এলো রংপুর বিভাগে, অর্থনীতিতে সুবাতাস

 

বিশেষ প্রতিনিধি, রংপুর : সাল’টা ২০১১, রংপুর জিলা স্কুল মাঠের এক জনসভায় দেওয়া ভাষনে রংপুর অঞ্চলের উন্নয়নের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অঙ্গীকার দিয়েছিলেন আর্থসামাজিক উন্নয়নে পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহের। সেই অপেক্ষায় ছিলো উত্তরের মানুষ। পরিশেষে এক যুগ পর সেই অপেক্ষার সমাপ্তি হয়েছে। মঙ্গলবার(১৪নভেম্বর) সকালে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্যাস সঞ্চালন লাইনের উদ্বোধন করেন। এরপর পীরগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর চৌরাহাট এলাকায় গ্যাস স্টেশন প্রাঙ্গণে ফলক উন্মোচন ও গ্যাস প্রজ্জ্বলন করেন পেট্রো বাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার। এতে দারুণ সন্তুষ্ট এই অঞ্চলের মানুষ।

ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেড(জিটিসিএল) ও পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড(পিজিসিএল) সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া-রংপুর-সৈয়দপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন তৈরি প্রকল্পের আওতায় বগুড়া থেকে গাইবান্ধা, রংপুর হয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুর পর্যন্ত ৩০ইঞ্চি ব্যাসের ১৫০কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের উচ্চচাপসম্পন্ন(১হাজার পিএসআইজি) গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন, এইচডিডি নিয়মে ৬টি নদী ও ২টি ক্যানেল ক্রসিং শেষ হয়েছে। পাইপলাইনটি নির্মাণে মালপত্র ক্রয় থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ধাপে আন্তর্জাতিক মান ও স্ট্যান্ডার্ড ফলো করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পাইপলাইনটির প্রেশার টেস্টিংসহ সব ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা সমাপ্ত করা হয়েছে এবং প্রাকৃতিক গ্যাস দ্বারা প্রেশারাইজড করে রাখা হয়েছে।

প্রায় ১হাজার ৫০০কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দৈনিক ৪০০মিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তরবঙ্গে সরবরাহ করা সম্ভব হবে। উন্মোচিত হলো সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। বদলে যাবে উত্তর জনপদের ১১টি জেলার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থা।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. আকবর আলী বলেন, পীরগঞ্জ হতে সৈয়দপুর পর্যন্ত মহাসড়কের সাইডে অনেক দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তা প্লট ক্রয় করে গ্যাসের জন্য অপেক্ষা করছেন। গ্যাস সরবরাহ চালু হলে আমাদের এইখানে আরও বহু কলকারখানা গড়ে উঠবে। এতে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের সংকট যাবে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন আরও বেশি দৃশ্যমান হবে। এই অঞ্চলের আর্থসামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। দারিদ্র্যতার বৈষম্য দূর হবে।

গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানী লিমিটেডের(জিটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রুখসানা নাজমা ইছহাক বলেন, পাইপলাইনে প্রতিদিন সরবরাহ সক্ষমতা ৫০কোটি স্ট্যান্ডার্ড কিউবিক ফিট গ্যাস। ৭থেকে ১৫দিনের মধ্যে আরম্ভ হবে সরবরাহ লাইন বসানোর কাজ। প্রায় ১হাজার ৫০০কোটি টাকা ব্যয়ে পাইপলাইন স্থাপনের কাজ আরম্ভ হয় ২০১৮সালে আর সমাপ্ত হয় চলমান বছরের মে মাসে।

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানী লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী বলেন, ‘উত্তরাঞ্চলে গ্যাস আসার ফলে দ্রুত শিল্পায়ন হবে। ব্যাপক মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। জ্বালানি সংকট থাকবে না। বনভূমি উজাড় হ্রাস পায় যাবে। এতে বায়ুদূষণ হ্রাস পায় যাওয়াসহ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা পাবে।

পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান জনেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, ‘শিল্পপ্রতিষ্ঠানে গ্যাস সরবরাহ করলে মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হবে। একারণে ১ম দিকে পরিকল্পিত শিল্প কলকারখানা, ইপিজেড এবং রিফুয়েলিং স্টেশনে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে। ধারাবাহিকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও সমানভাবে দেওয়া হবে। ২০২৬সালের পর সব পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

 

মর্নিংনিউজ/বিআই/এসইউ

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *