বোরো ফসলের আবাদ জিম্মি প্রভাবশালীদের হাতে

যশোরের কেশবপুরের কিছু সংখ্যক প্রভাবশালী ঘের মালিক নির্দিষ্ট সময়ে তাদের ঘেরের (আবদ্ধ জায়গায় মাছ চাষের স্থান) ও বিলের পানি নিষ্কাশনের সুযোগ করে না দেওয়ায় আশেপাশে প্রায় ৫৭টা বিলের বোরো আবাদ করতে কৃষকের বিলম্ব হচ্ছে। এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে ভবদহ স্লুইচ গেইট যা যশোরের কেশবপুর উপজেলার পুর্বাঞ্চলের সীমান্তে অবস্থিত। ঘের মালিকদের হাতে এখন হাজার হাজার কৃষক যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ হল এই যে, তারা বিলের পানি নিষ্কাশনের নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করলেও ঘের মালিকরা নিজস্ব প্রভাবে গড়িমসি করায় এবারের বোরো আবাদ করতে না পারার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার মোট প্রায় ২৭টা বিল এই প্রক্রিয়ার আওতাধীন রয়েছে। তাছাড়াও পাঁজিয়া ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা ও মনোহরনগর এবং সুফলাকাটি ইউনিয়নের নারায়ণপুর ও বেতীখোলা এলাকার বিলের বর্ষায় জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি কাটাখালি ৮ব্যান্ড স্লুইচ গেট দিয়ে প্রবাহিত হয়। আরও মঙ্গলকোট ও গৌরীঘোনা ইউনিয়নের প্রায় ৩০টা বিলের পানি পাথরা খাল দিয়ে ভদ্রানদী হয়ে শ্রীনদীতে প্রবাহিত হয়। স্থানীয় প্রভাবশালী ঘের ব্যাবসায়ীরা এসব বিল ক্ষমতা বলে দখল করে মাছের ঘের করায় পানির প্রবাহ আর আগের মত নেই। এজন্যই ইতোমধ্যে ভদ্রানদী ও শ্রীনদীর তলদেশ ভরাট হতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে ৫৭টা বিলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। পাথরা গ্রামের কৃষকরা জানান যে প্রতিবছর ১৫ই পৌষের ভেতরে ধান চাষের উপযোগী পানি নিষ্কাশন করে কৃষকদের বোরো আবাদের শর্তে লিজ নিয়ে ঘের মালিকরা মাছের ঘের করেন। তারা আরো অভিযোগ করেন, চলতি বছর ঘের মালিকরা পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য কৃষকদের কাছে বিঘাপ্রতি ১২০০টাকা করে দাবি করে। এই অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে কৃষকের সাথে কোন অবস্থাতেই কোন শর্তে ছিল না। তারপরও সেই হারে কৃষকরা প্রায় ২৫/২৬লক্ষ টাকা পরিমাণ পরিশোধ করলেও মালিকরা এ কাজে গড়িমসি শুরু করেছে। কৃষকদের সাথে ঘেরের পানি নিষ্কাশনে ঘের মালিকদের শর্ত থাকলেও ১৬ই জানুযারি পর্যন্ত তারা ঘেরের পানি নিষ্কাশন শুরু করেনি। কৃষকরা পানির কথা বলতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন ধরনের ভয়,ভীতি ও হুমকি দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া অত্র এলাকার কৃষকদের অভিযোগ যে, “যদি তারা ঘেরে সেচ দেয়, তবে তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হয়। তাছাড়া দেরিতে সেচ শুরু করলে মাছের দামও বেশি পাওয়া যায় আর সাথে সাথে মাছও বড় হয়। এজন্যে বিলের পানি নিষ্কাশনে তারা সময়ক্ষেপণ করে থাকেন। “পানি নিষ্কাশন কমিটির নেতা জনাব মহিরউদ্দীন বিশ্বাস জানান, পাঁজিয়া-পাথরা বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য পাথরা স্লুইচ গেটের ওপর গত ১৬ই ডিসেম্বর থেকে ১৯টি স্যালোমেশিন লাগানো হয়েছে। অন্যদিকে বুড়ুলি স্লুইস গেটের ওপর ২০টি স্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন কার্যক্রম পরিচালনা ইতোমধ্য শুরু করা হয়েছে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিদিন প্রায় ২লাখ টাকার মত ডিজেল খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে পাঁজিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব জসিমউদ্দীন সাহেব জানান,”বাগডাঙ্গায় অতিরিক্ত পানির চাপে ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে কৃষকের রোপণকৃত বোরো ও ইরি ধান তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন যে এখনও ১০/১৫দিন না গেলে বলা যাবে না কোন বিলে ধানচাষ ঠিকঠাক হবে, আর কোন বিলে হবেনা।” এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার মর্নিং নিউজ বিডি ডটকমকে বলেন, চলতি বছর প্রায় ১৪,৫২০হেক্টর জমিতে ফসল আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু আবাদ করা হয়েছে মাত্র প্রায় ২,৮৩৩হেক্টর জমিতে। এই শীতের মৌসুমে এখনই বোরো রোপণের উপযুক্ত সময়। যদি সময় মত আবাদ করা সম্ভবপর না হয় তবে ফলন বিপর্যয়ের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

 

মর্নিং নিউজ/আই/শাশি

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *