উর্বর ভূমির ফসলি মাঠ টেওসাগাড়ি বিল। এই বিলে বছরে তিনটি ফসল উৎপন্ন হয়। সেই বিলে অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র পুকুর খনন করায় বন্ধ হয়েছে পানি নিস্কাশনের নালাটি। এখন বিলজুড়ে দেখা দিয়েছে জলবদ্ধতা। পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের টেওসাগাড়ি বিলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ- টেওসাগাড়ি বিলের জমি উর্বর প্রকৃতির হওয়ায় বছরজুড়েই ধান, পাট, রসুন ভুট্টা, গম মসুরসহ মসলা জাতীয় বিভিন্ন ফসল ফলতো। বিলের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া নালার পানি দিয়ে চাষ আবাদ হতো। আবার অতি বর্ষণের পানি নিষ্কাশনও হতো ঐ নালা দিয়েই। এতে নির্বিঘ্নে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করতেন কৃষক।
কৃষকরা জানান, স্বার্থান্বেষি মহল যতেচ্ছাভাবে বিলের ফসলি জমি কেটে পুকুর খনন করায় ভড়াট হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের সেই নালা। নালাটি অস্তিত্বহীন হয়ে পড়লেও দীর্ঘ দিন সংস্কার করা হয়নি। এখন সামন্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে টেওয়াসাগাড়ি বিল এলাকা। কয়েক বছর ধরে চলে আসা জলাবদ্ধতার অন্তহীন সম্যসায় কৃষিতে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ওই বিলের ওপর নির্ভরশীল কৃষক।
ভুক্তভোগী কৃষক হাবিবুর রহমানের অভিযোগ- টেওসাগাড়ি বিলে তার ১০ বিঘা জমির ধান পেকে গেছে। কিন্তু বৃষ্টির হানায় দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। নালাটি ভরাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। এখন জলাবদ্ধতার কারণে পাকা ধান ঘরে তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারমতো সমস্যা ভুট্টা, পাট ও তিল চাষিদেরও। বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় বিলজুড়ে জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকা ফসল মরে যাচ্ছে।
এলাকার কমপেক্ষ ২০জন কৃষক অভিযোগ করেন, কৃষি জমিতে পুকুর খনন বন্ধ ও নালা সংস্কার করে জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য গেল বছর স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রতিকার হয়নি। উপরন্ত বেড়েছে পুকুর খননের সংখ্যা। এবছর জলাবদ্ধতার সমস্যা নতুন করে প্রকট আকার ধারন করেছে। কৃষি ও কৃষকদের স্বার্থে ভরাট হয়ে পড়া পানি নিষ্কাশনের নালাটি দ্রুত সংস্কার করার দাবী জানিয়েছেন এলাকার কৃষকরা।
আরও পড়ুন: বান্দরবানের লামায় আরও একটি হাতির মৃত্যু
মশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, টেওসাগাড়ি বিলটি এলাকার কৃষকদের আর্শীবাদ সরুপ। ইউনিয়নের সাহাপুর থেকে বিলের মাঝ দিয়ে প্রায় ৮ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি নিষ্কাশনের নালা রয়েছে। বিলের পানি ওই নালা দিয়ে ভাটির গুমানী নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু দীর্ঘ দিন ওই নালাটি সংস্কার হয়না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তমাল হোসেন বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কৃষি বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, অপরিকল্পিত পুকুর খননের কারণে নালা বন্ধ হয়ে পড়ায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। নালা সংস্কারের জন্য সমন্বিত পানি উন্নয়ন কর্পোরেশন (পানাসী) দপ্তরে কথা বলে স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে।