সারিতে দাঁড়িয়ে গরুর গাড়ি, দুধারে হাজার হাজার মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, শুরু হলো দৌড়, কে হবে প্রথম? দৌড়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে গরুর লেজে বসিয়ে দিলেন কামড়, গরু জোড়া ছুটতে শুরু করলো দ্বিগুণ গতিতে, সকলকে চমকে দিয়ে প্রথম হলেন ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মিয়ারাজ হোসেন। শনিবার ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৬নম্বর গান্না ইউনিয়নের বেতাই গ্রামের দক্ষিণ মাঠে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত গরুর গাড়ির দৌড় প্রতিযোগিতায় এমনই এক ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে। প্রতিযোগীতায় যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ১১টি গরুর গাড়ি অংশগ্রহণ করে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এই ভিন্নধর্মী প্রতিযোগিতাটি।
গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি এ প্রতিযোগীতা দেখতে হাজির হয়েছিল হাজার হাজার দর্শক। সকাল থেকে খেলা দেখতে আশে পাশের গ্রামসহ দূরদুরান্ত থেকে নারী-পুরুষ ও শিশুরা আসতে থাকে। দুপুর গড়াতেই এ ভিন্নধর্মী দৌড় প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। দুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে মেলা। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। ৬নম্বর গান্না ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল হাসান মাসুমের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এই প্রতিযোগিতা।
প্রতিযোগিতা শুরুর আগে অংশগ্রহনকারী গরুগুলোকে খুব শান্ত স্বভাবের দেখা গেলেও জোয়াল কাঁধে দেওয়ার পর চালকের হাতের ছোঁয়ায় মুহুর্তে পাল্টে যায় পুরো চিত্র। একে অপরকে পেছনে ফেলতে ছুটতে শুরু করে। এমন ঘটনা দেখে উচ্ছ্বছিত উপস্থিত নারী-পুরুষ ও শিশুরা। দিনভর এ খেলায় যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা থেকে ১১টি গরুর গাড়ি অংশ নেয়। অনেকগুলো পর্ব শেষে শেষ বিকালে চুড়ান্ত পর্বে ৫টি গাড়ি অংশগ্রহন করে। খেলায় প্রথম স্থান অধিকার করে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মিয়ারাজ হোসেন। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন যশোর জোড়াদহের মোঃ আলি আকবর। তৃতীয় স্থান অধিকার করেছেন চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার গঙ্গাদাসপুরের সোয়াদ হোসেন। এছাড়া চতুর্থ স্থান অধিকার করেছেন যশোরের মনোহরপুরের তুহিন হোসেন। পঞ্চম স্থান অধিকার করেছেন যশোর সদর উপজেলার জলকরের বিল্লাল হোসেন।
প্রধান অতিথি বিজয়ী প্রথম স্থান অধিকারী মিয়ারাজ হোসেনকে ২০হাজার, দ্বিতীয় আলি আকবরকে ১৫হাজার এবং তৃতীয় সোয়াদ হোসেনকে নগদ ১০হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম স্থান অধিকার করা যশোরের তুহিন হোসেন, ও বিল্লাল হোসেনকে শান্তনা পুরস্কার হিসাবে ২হাজার টাকা প্রদান করেন।
গরুর গাড়ি দৌড় দেখতে আসার বিথী রায় জানান, আমি আমার পরিবারের সাথে এসেছি। আধুনিক যুগে এসে গরুর গাড়ির এমন দৌড় প্রতিযোগিতা দেখে আমাদের খুব ভালো লাগছে। তাই প্রতিনিয়ত এ ধরনের উৎসব আয়োজন করার দাবি তার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, এই গান্না একসময় সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। এখন মানুষ গান্নায় বিনোদনের জন্য আসে। সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ, মাদক দুর করতে এ ধরনের আয়োজনে সমাজের বিত্তশালীদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের আয়োজক চেয়ারম্যান আতিকুল হাসান মাসুম বলেন, এক যুগ ধরে ঐতিহ্যবাহি এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার মানুষের আনন্দ দেওয়ার জন্য আর গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তবে দেশের বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্থানীয় ও সরকারি পৃষ্টপোষকতায় প্রতিটি এলাকায় এরকম আয়োজন করা প্রয়োজন।