ঝিনাইদহে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি, অভিযোগ অস্বীকার চেয়ারম্যানের

ঝিনাইদহে রাতের আধারে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে। যদিও অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মাটি কেটে ভাটায় বিক্রির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালিচরণপুর ইউনিয়নের ভগবাননগর গ্রামের পূর্ব পাড়া খালে।

স্থানীয় ও মাটিকাটার সাথে যুক্তরা বলছেন, কালিচরণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম রাতের অন্ধকারে খালের মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি করার অনুমোতি দিয়েছেন। প্রতিদিন রাতে দুইটি ভেকু দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। আর প্রায় ৩০টি ট্রাক্টর গাড়ির মাধ্যেমে এ মাটি পরিবহন করে বিভিন্ন ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।

খনন কাজে নিয়জিত রনি নামের এক ব্যক্তি জানান, খাল খননের কাজটি চেয়ারম্যান অনুমতি নিয়ে এসছেন। তার নির্দেশে আমরা কাজ করছি। আমরা প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোর রাত পর্যন্ত কাজ করছি। এ কাজ দেখাশোনা করার জন্য চেয়ারম্যান সাবেক ও বর্তমান মেম্বরদের দায়িক্ত দিয়েছেন, তারাই মূলত এ কাজ দেখাশোনা করছেন। আমরা কর্মচারি হিসাবে কাজ করছি। খালের মাটি কেটে ইটভাটায় নেওয়া হচ্ছে।

গ্রামের কটন বিশ্বাস নামের এক ব্যক্তি জানান, আমাদের গ্রামের পূর্বপাড়ার লোকজন এখানে পাট জাগ দেয়। আমাদের চেয়ারম্যান উপর মহল থেকে খাল কাটার অনুমতি নিয়ে এসেছে। খালটি কেটে একটু গভীর করে পাড় বেঁধে দেবে যাতে মানুষ পাট জাগ দিতে পারে। এখন এই খালটি কাটছে অনেক গভির করে। আর পাড়ে অল্প কিছু মাটি দিয়ে বাঁধছে। বাকি মাটিগুলো সব বাইরে ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। আজ তিন রাত ধরে মাটি কাটার কাজ চলছে। প্রতিনিধি সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ভোররাত পর্যন্ত খালের মাটি কাটার কাজ চলে। দিনের বেলায় বন্ধ রাখে। আমাদের চেয়ারম্যান তার লোকজন দিয়ে এই খালটি খনন করাচ্ছে। যে ভাবে কাটছে পাট জাগ দেয়া তো দূরের কথা মানুষ ওখানে নামতেই পারবে না। তিনি জানান, চেয়ারম্যান এখানে আসে না। শামসুল, মনিরুল, নজির, জাহাঙ্গীর, সাত্তার ও মোদাচ্ছের হোসেনের দায়িক্ত দিয়েছেন।

নামক প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই গ্রামের এক কৃষক বলেন, খালটি যেভাবে খনন করা হচ্ছে তাতে এখানে আমরা কেউ পাট জাগ দিতে পারব না। শুধু তাই নয় পাড় না বেঁধে এখানকার মাটি ইটভাটায় বিক্রি করে দিচ্ছে। আমাদের প্রচুর ক্ষতি করছে তাঁরা। এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ফোন করে জানালে তিনি থানার ওসির সাথে কথা বলতে বলেন। থানার ওসিকে বিস্তারিত বললে তিনি জানান বিষয়টি দেখছি। এর দুই মিনিট পর খাল খনন করার কাজ বন্ধ করে মাটি কাটার গাড়িগুলো বিভিন্ন স্থানের লুকিয়ে রাখে এবং যারা মাটি কাটছিল তারা মাঠের মধ্যে চলে যায়। কিন্তু পুুুুলিশ আমাদের গ্রামে উপস্থিত হয় না। আধাঘন্টা পর আবারও মাটি কাটার কাজ শুরু হয়। অভিযোগ দেবো কার কাছে কেউ কাজ করে না। আমাদের কৃষকের দুঃখ কষ্টের কথা কেউ বোঝে না

এ বিষয়ে ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মো. সাত্তার বলেন, খালটি খনন কাজ আমাদের জাহাঙ্গীর চেয়ারম্যান করছে। খালের মাটি খনন করে পাড় বাধা হচ্ছে, বাকি মাটি ভাটায় বিক্রি হচ্ছে কিনা এবিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। চেয়ারম্যানের কাছে ফোন দেন তিনি বলবেন বলে যোগ করেন।

কালিচরণপুর ইউনিয়ন এর চেয়ারম্যানের জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ইউনিয়নের তিন গ্রামের পাট চাষিদের পাট জাগ দেওয়ার জন্য কোন জলাকার নেই। খালটি খনন করে পাট জাগ দেওয়ার উপযোগী করতে স্থানীয়রা বেশ কিছুদিন ধরে দাবি করে আসছিল। এরই প্রেক্ষিতে মাটি কাটার মৌখিক অনুমোতি দিয়েছে কিন্তু ওখান কার মাটি চুরি করে বিক্রি করছে কি না আমার জানা নেই। মাটি ভাটায় দিতে বলেছি এ কথা যারা বলছে তারা অসত্য কথা বলছে। এসবের মধ্যে আমি থাকি না। আমি কোন অনুমতি দিইনি। গ্রামের কৃষকরা একটি আবেদন করেছে। যার ফলে এ কাজের একটা মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু মাটি যদি কেউ বিক্রি করে থাকে তাহলে সে চোর, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে যোগ করেন চেয়াারম্যান।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, খাল খননের কোন অনুমতি আমি দেইনি। তবে খাল খনন করে কে বা কারা মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছে বিষয়টি কিছুক্ষণ আগে চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। আপনিও বিষয়টি জানালেন। রাতে মাটি কাটার কাজ করছে, এখানে আমাদের কিছু বাধ্যবাধকতা থাকে, তারপরও বিষয়টি আমি দেখব বলে তিনি জানান।

ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আবু রায়হান মোবাইলে জানান, খাল খননের কিছু কাজ চলছে ওই এলাকায় অনুমতি দেয়া আছে কি দেখে বলতে হবে। ঠিকানা দেন অনুমতি দেওয়া আছে কি দেখে পরে বলতে পারবো এখন মিটিংএ আছি। তিনি আরো জানান, খাল খনন করে মাটি ইটভাটায় বিক্রি করার কোন নিয়ম নেই। এটা যদি করে থাকে তারা অপরাধ করছে বিষয়টা খোঁজ নিয়ে দেখব।

মর্নিংনিউজ/বিআই/এএএম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *